প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত বৃহস্পতিবার, স্কুল সার্ভিস কমিশন বা SSC মামলায় বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি তিনি। শেষে কালো চশমা পরে ওইদিন ভার্চুয়ালি হাজিরা দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। ওইদিন দুর্নীতি মামলায় আলিপুর আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারী এবং তাঁর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীও। আজ ফের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজিরা দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জীবনকৃষ্ণ সাহা প্রমুখেরা। এদিনও কালো চশমা পরে, হাসপাতালের বেডে শুয়েই হাজিরা দিতে দেখা গেল পার্থকে। সেখানে বারংবার নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলতে থাকায় ধমক দেন বিচারক।
পার্থকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন আইনজীবীর
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, এদিন আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে সওয়াল করে গিয়েছেন আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী। বিচারকের কাছে তাঁর দাবি, এই মামলায় মোট চারটি চার্জশিট জমা পড়েছে। প্রথম দিকের চার্জশিটে পার্থের নাম ছিল না। অথচ শেষে গিয়ে দাবি করা হয়েছে, এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত পার্থ। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এছাড়াও পার্থের আইনজীবীর দাবি, তৎকালীন মন্ত্রী হওয়ায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। নিরপেক্ষ কোনও সাক্ষীর বয়ানেও কখনও দাবি করা হয়নি যে, পার্থ বেআইনি ভাবে নিয়োগের সঙ্গে জড়িত। এদিন পার্থকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনও করেন তাঁর আইনজীবী।
অন্য দিকে, এসএসসি-র নবম-দশমের মামলায় চার্জ গঠনের সমস্ত অভিযুক্তর অভিযোগগুলি পড়ে বিচারক বলেন, ‘‘আপনারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে ষড়যন্ত্র করে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। পরীক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রাপ্ত নম্বরকেও বিকৃত করা হয়েছে। এমনকি জীবনকৃষ্ণ সাহা, প্রসন্ন রায়-সহ একাধিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন। চাকরিপ্রার্থীদের প্রভাবিত করে ঘুষ দিতে বাধ্য করেছেন যা সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধ।’’ তা ছাড়া, কখনও ভুয়ো নিয়োগপত্র ব্যবহার করে, কখনও আবার বৈদ্যুতিন নথি জাল করে প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে বলেও জানান বিচারক। এরপরই পার্থকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করেন আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক।
পার্থকে ধমক বিচারকের
এদিন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বিচারক বলেন, অশোক সাহা, শান্তিপ্রসাদ সিংহ, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে নিয়োগ করে অবৈধ কাজ করিয়েছেন তিনি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারের মত এবারেও পার্থ ফের দাবি করেন যে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। এর পর আরও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দেন বিচারক। বলেন, ‘‘আপনার আইনজীবী রয়েছেন, কিছু জানার থাকলে তাঁকে বলুন।’’ পাল্টা পার্থ বলেন, ‘‘তা হলে আমার কিছু বলার অধিকার রইল না?’’ বিচারক উত্তর দেন, ‘‘যখন সেই সময় আসবে, তখন বলবেন। এখন যতটুকু জানতে চাওয়া হয়েছে, ততটুকু বলুন।’’
আরও পড়ুন: পুজোর আগে ৮০০ কর্মীর বেতন দিচ্ছে না কৃষ্ণনগর পুরসভা! টাকা নেই দাবি পুরপ্রধানের
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। পরবর্তী কালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। পরে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই-ও গ্রেফতার করে পার্থকে। পাশাপাশি, সিবিআইয়ের প্রাথমিক নিয়োগ মামলাতে নাম জড়ায় পার্থের। কিন্তু আগস্টে স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআই মামলাতে জামিন পেয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তখনও জেলমুক্তি হয়নি তাঁর।