স্বামী জীবিত, এদিকে বিধবা ভাতা পান স্ত্রী! তৃণমূল নেতার কীর্তিতে বিরাট ফ্যাসাদে মহিলা

Published on:

tmc santipur

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাজ্যে একের পর এক প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েই চলেছে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিতে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে টাকা। আর এবার এই প্রকল্পের চক্করে একজন সধবাকে হতে হল বিধবা। অর্থাৎ গৃহবধূ চেয়েছিলেন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ কিন্তু সরকারি খাতায় সেটি হয়ে গিয়েছে ‘বিধবা ভাতা’ তাও আবার তাঁদের অজান্তেই। এদিকে স্বামী জীবিত। যার ফলে এবার ব্যাপক ফ্যাসাদে ফেঁসেছে গোটা পরিবার।

ঘটনাটি কী?

WhatsApp Community Join Now

জানা গিয়েছে নদীয়ার শান্তিপুর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের আড়পাড়ার বাসিন্দা শেফালি দে নামে এক গৃহবধুর গোটা পরিবার একসময় ছিল তাঁতশ্রমিক। কিন্তু তাঁতের কাজে লাভ কমে আসায় সে কাজ ছেড়ে দিয়েছে তাঁর পরিবার। এখন তারা সকলেই দিনমজুরি করেন। আর এই আর্থিক অনটন খানিক দূর করতে তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নির্মিত লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছিলেন শেফালি। শেষে স্থানীয় তৃণমূল নেতার মাধ্যমে তাঁর ভাতার ব্যবস্থা হয়েও যায়। প্রতি মাসে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে হাজার টাকা করে ঢুকতে শুরু করে। কিন্তু সেই ভাতাই এবার কাল হল। আসলে প্রতি মাসে যে ১০০০ টাকা করে ঢুকছে সেটি আসলে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা নয়, আসলে এটি বিধবা ভাতা। যা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি পরিবারের কেউ।

টাকা ফেরতের হুঁশিয়ারি বিডিও অফিসারের

সম্প্রতি সেখানকার বিডিও অফিস থেকে শেফালি দে নামে ওই গৃহবধূকে তলব করা হয় এবং তাঁকে জানানো হয় যে তাঁর স্বামী পরেশবাবু বর্তমানে ওড়িশায় শ্রমিকের কাজ করেন। তাহলে তিনি সধবা হওয়া সত্ত্বেও কেন প্রতি মাসে বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। আর এই কথা শুনে মাথায় বাজ পড়ে শেফালির পরিবারের ওপর। এদিকে বিডিও অফিসার তাঁদের জানান এতদিন যা টাকা পেয়েছেন তাঁরা সম্পূর্ণ ফেরত না দিলে ওই গৃহবধূর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু শেফালির পরিবারের এমনই খারাপ অবস্থা যে টাকা ফেরত দেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা নেই তাঁদের। এর পর বধূর বিরুদ্ধে শান্তিপুর থানায় সরকারি প্রকল্পের অপব্যবহারের অভিযোগ দায়ের করেছেন বিডিও।

অভিযোগ অস্বীকার উত্তমের!

পুলিশ প্রায় গোটা পরিবারকে থানায় ডেকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখেছে জালিয়াতির অভিযোগে। পাশাপাশি বিডিও আটকে দিয়েছেন আধার কার্ড এবং ব্যাঙ্কের নথি। বিডিও জানিয়েছেন, হয় ওকে টাকা ফেরত দিতে হবে নইলে কে এই কাজ করেছে তার নাম বলতে হবে। আর তখনই শেফালি দেবী সেখানকার স্থানীয় প্রাক্তন তৃণমূল নেতা উত্তম দেবনাথের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমি তো লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য বলেছিলাম। উত্তম এসে আমাকে দিয়ে একটা ফর্ম ফিল আপ করিয়ে নিয়ে যায়। সেটা যে বিধবা ভাতার ফর্ম তা আমি জানতাম না। এসব উত্তমের কাজ। ”এদিকে উত্তম নিজে সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছে, ‘‘দল করতাম। তাই সাধারণ মানুষের কাজ করে দিতাম। অনেকের অনেক নথিপত্রই সরকারি দফতরে জমা দিয়েছি। কিন্তু এখানে যে অভিযোগ উঠছে, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’’

এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইরা গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই কাণ্ড করছে। তারা সাধারণ মানুষকে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এক খাতের টাকা অন্য খাতে সরাচ্ছে। এক প্রকল্পের নাম করে অন্য প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ জানতেও পারছেন না যে তাঁরা সধবা ভাতা পাচ্ছেন না বিধবা ভাতা পাচ্ছেন, না লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছেন। এমনকি নিজেদের লোককে ভাতার টাকা পাইয়ে দিতে তৃণমূল জীবিত মানুষকে মৃত বলে ঘোষণা করতেও দুবার ভাবে না।”

সঙ্গে থাকুন ➥
X