প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আরজি করের পর এবার দুর্গাপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ুয়া ধর্ষণের ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি। ইতিমধ্যেই এই ‘গণধর্ষণের’ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শনিবার তাঁদের আদালতে পেশ করা হলে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় কাদা ছোড়াছুড়ির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অন্দরে। উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে দুর্গাপুরে মেডিক্যাল পড়ুয়ার গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে মমতা (Mamata Banerjee) কিছু মন্তব্য করায় বিস্তর সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ধর্ষণ নিয়ে কী বলেছিলেন মমতা?
রবিবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দুর্গাপুর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ কাণ্ডের ঘটনাটিকে ঘিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, “অনেক জায়গায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে তাঁরা কেয়ার করে না। এমনকি নির্যাতিতাকে আদালতে যাওয়ার সময়ে রাস্তায় জ্বালিয়ে মেরে দেওয়া হয়। বাংলায় এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে আসেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলির উচিত পড়ুয়াদের বিশেষ করে মেয়েদের রাতের দিকে বাইরে বেরনো নিয়ন্ত্রণ করা। কারণ পুলিশ তো জানতে পারে না, কে কখন রাতের বেলা বেরিয়ে যাচ্ছে।” এখানেই শেষ নয়, তিনি এদিন ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
মেয়েদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সরকারের ভূমিকা
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে। শুরু হয় রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিতর্ক। আর সেই বিতর্ক আরও জোরদার করতে আসরে নেমে পড়ে বিরোধীরাও। পাশাপাশি পড়ুয়াদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেবল প্রাইভেট কলেজের উপরে কেন চাপিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন একাংশ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার চরম পতনের দায় মুখ্যমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। আশ্চর্যের বিষয় হল, এখনও তিনি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের উপর দোষ চাপিয়েছেন!’ এমতাবস্থায় যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ঘিরে এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে এবার এই নিয়ে মুখ খুললেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মন্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ!
গতকাল অর্থাৎ রবিবার, উত্তরবঙ্গে বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে জলদাপাড়া বনবিভাগের নীলপাড়া রেঞ্জে রিভিউ মিটিং করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হন তিনি। দুর্গাপুর কাণ্ডে তার বক্তব্যকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক নিয়ে তখন মমতা বলেন, ‘দমদম এয়ারপোর্টে আমি কিছু কথা বলেছি। আমার সেই কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আপনাদের অনুরোধ করছি, আমার বলা কথা গুলো যেন বিকৃত না করা হয়। আমাকে আপনারা প্রশ্ন করবেন, তার পরে আমার উত্তরের ভুল ব্যাখ্যা করবেন…আমি ভাত খাই পুরোটা না বলে বলছেন, শুধু আমি ভাত… এ সব রাজনীতি আমার সঙ্গে করার চেষ্টা করবেন না। আমি তো তাও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হই, অনেকে তো সামনাসামনি হয় না।’ এক্ষেত্রে আকার ইঙ্গিতে তিনি যে নাম না করে নরেন্দ্র মোদিকে টার্গেট করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: মহিলার সাথে নগ্ন অবস্থায় …! চাকদার তৃণমূল নেতার ভিডিও ভাইরাল, বড় সিদ্ধান্ত নিল দল
ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অধিকারী
শাসকদলের তরফ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ উঠতেই তেড়ে উঠেছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন রাতে টুইট করে তিনি জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর ‘মেয়েদের রাতে বাইরে যাওয়া উচিত নয়’ বক্তব্য ‘মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরিচায়ক’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য কোনওভাবে বিকৃত করা হয়নি। প্রমাণ-সহ ভিডিও আমাদের কাছে রয়েছে। এই মন্তব্য আসলে নারী নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারের চরম ব্যর্থতা আড়াল করার কৌশল।” এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও অভিযোগ করেন, “পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনাকে ঢাকতে এখন ভিকটিম শেমিং-ই রাজ্য সরকারের নীতি হয়ে উঠেছে।”