প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: হাতে মাত্র আর কয়েকটা দিন বাকি। নতুন বছর পড়তেই একের পর এক সরকারী অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন বা BGBS-এর আসর বসবে। তার জন্যই চলছে জোর কদমে প্রস্তুতি। কোনরকম খামতি বা ফাঁক রাখতে চাইছে না প্রশাসন। কিন্তু এই আবহেই ঘটে গেল এক চমকপ্রদ ঘটনা। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউসিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ বা হিডকো -এর চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব নিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিস্ফোরক মন্তব্যের জেরে একঘর ফিরহাদ?
সম্প্রতি মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ধর্মবিদ্বেষী একাধিক মন্তব্য শাসকদলের ওপর একাধিক চাপ প্রয়োগ করছে। কিছুদিন আগে ‘ফিরহাদ – 30’ নামে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার স্বপ্ন পশ্চিমবঙ্গের ৫০ শতাংশ লোক একদিন উর্দুতে কথা বলবেন। আল্লাহ তালার দেখানো পথে চললে আমরা সফল হবই।’ আর তাতেই রাজনীতিতে আগুনে ঘি ঢেলে দেন মেয়র। একাধিক পাল্টা মন্তব্য করতে থাকে গেরুয়া শিবির। এমনকি ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেন নিজের দলেরই একাংশ। আর এর পর থেকেই ফিরহাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দূরত্ব বাড়তে থাকে বলে জানা গিয়েছে। কারণ তিনি চান না ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের হাতে এমন কোনও ইস্যু চলে আসুক যা দলের জেতার পক্ষে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আর সেই আবহেই এবার বড় পদক্ষেপ নিলেন মমতা।
হিডকো চেয়ারম্যান থেকে সরবেন ফিরহাদ!
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানা গিয়েছে, হিডকোকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে আর রাখা হবে না। এখন থেকে হিডকোকে আনা হবে প্রশাসনিক সংস্কার এবং কর্মিবর্গ দফতরের অধীনে। এদিকে সেই দফতরের মুখ্যপদে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। আর তাতেই ধন্দ জাগছে তবে কি মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হিডকোর চেয়ারম্যান পদে বসছেন? এবং এই প্রশ্নও উঠছে যে কোন কারণে ফিরহাদকে হিডকোর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরাতে চলেছেন? তবে রাজনৈতিক মহল এর দাবি বিজেপির চাপেই আসলে শাসকদল বিধানসভা ভোটের আগে ফিরহাদের পদ খসতে চলেছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক নবান্নের এক আধিকারিকের জানিয়েছেন, ‘‘সম্প্রতি হাতিশালায় ইনফোসিসের নতুন ক্যাম্পাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল হিডকো। চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম ওই অনুষ্ঠানে যাননি। বরং সেখানে মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন প্রধান অতিথি। সে দিনই হিডকো নিয়ে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছিল।’’ বাম আমলে হিডকো ছিল আবাসন দফতরের অধীনে। আবাসনমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে সিপিএমের গৌতম দেব দীর্ঘদিন ছিলেন হিডকোর চেয়ারম্যান। কিন্তু তৃণমূল সরকার শাসনে আসার পর থেকেই হিডকোকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে আনা হয়েছিল।
যেহেতু পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তাই সেই সুবাদে বর্তমানে হিডকোর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু ১৪ বছর পরে ফের হিডকোর ‘চেয়ারম্যান’ বদলানোয় চারিদিক থেকে উঠছে নানা প্রশ্ন। এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত এবং সঠিক তথ্য জানতে ফিরহাদকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। হোয়াট্সঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হলেও জবাব পাওয়া যায়নি।