প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যে গরু পাচার মামলায় টানা ২৫ মাস পরে জেলমুক্তি হয়েছে বীরভূমের বাঘ অনুব্রত মণ্ডলের। গত বছরের শেষে পুজোর মুখে জামিনে মুক্তির পর মেয়েকে নিয়ে নিজের জেলায় ফেরেন অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। বাড়ি ফিরতেই জেলায় দলের কর্তৃত্ব ফিরেছে তাঁর হাতে। কেষ্ট ফিরতেই দলের কোর কমিটির নেতারাও বেশ খুশি। কিন্তু জেল থেকে বাড়ি ফিরতেই ফের ঠান্ডা লড়াই শুরু হল জেলা সভাধিপতি কাজল শেখের মধ্যে। বেশ কয়েকবার এর উদাহরণ দেখা গিয়েছিল। আর এবার সেই প্রসঙ্গই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) তুলে ধরলেন নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে।
তৃণমূলের বিশেষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল
সূত্রের খবর, পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তৃণমূলের বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ডাকে তৃণমূলের এই বিশেষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস সর্বস্তরের কর্মীদের সভা’। মূলত বছর ঘুরলেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। তাই নির্বাচনের আগে দলকে কোন কোন উদ্যোগ আগে নিতে হবে সেই নিয়ে আজকের এই সভা ছিল। সকাল থেকেই দলে দলে কর্মী–সমর্থকরা ভিড় করেছেন। উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মদন মিত্র, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে অনুব্রত মণ্ডল এর উপস্থিতি।
কেন তালিকায় বীরভূমের নাম নেই?
আজকের এই শাসকদলের কর্মীদের সভায় আলোচনার ক্ষেত্রে মূল টার্গেট ছিল ছাব্বিশের ভোটে বিজেপির কারচুপি ঠেকানো। তাই ভোটার লিস্ট থেকে ভুতুড়ে ভোটার তাড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লাগল শাসকদল। এই আবহে আজ রাজ্যে ‘ভূতুড়ে’ ভোটার তালিকা নিয়ে কড়া বার্তা দেন মমতা। বেআইনি ভোটার চিহ্নিতকরণে তাই একটি কমিটিও গঠন করেন তিনি। প্রতিটি জেলাকে ৩ দিন অন্তর রিপোর্ট পাঠাতে হবে এই কমিটিতে। কিন্তু সেই কমিটিতে নেই বীরভূমের নাম। কিন্তু কেন ওই কমিটিতে বীরভূমের কোনও নেতাকে রাখা হল না তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন? শেষে এই জল্পনার নিজেই অবসান করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সকলকে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ মমতার
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে, “বীরভূমে ইচ্ছা করেই এই তালিকায় রাখা হয়নি। কারণ বীরভূমে কোর কমিটি রয়েছে। ওরা ঠিক ওদের মত কাজ করে নেবে।” এরপরই অনুব্রত মণ্ডলের উদ্দেশে মমতা বলেন, “কেষ্ট কাউকে কিন্তু বাদ দেওয়া যাবে না। কাজলকেও নিতে হবে। আশিসদা আর শতাব্দীকে ডেকে নেবে।” মুখ্যমন্ত্রীর আদেশে মাথা নেড়ে সম্মতি জানান অনুব্রত। যা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে বীরভূমে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেষ্টতেই ভরসা রাখছেন দলনেত্রী।
এছাড়াও মমতা নওদার বিধায়ককে বলেন, “মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকা কেষ্ট দেখবে। বুথ কমিটি গড়ে কাজ করবেন।” একের পর এক দায়িত্ব দেখে সকল রাজনীতিবিদ মনে করছেন যে জেলায় ফেরার পর থেকে বারংবার যেহেতু খবরের শিরোনামে অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। তাই সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কেষ্টকে এত দায়িত্ব এবং বার্তা দেওয়া হচ্ছে।