প্রীতি পোদ্দার, ডোমকল: নকল পুলিশ সেজে পুলিশের গাড়িতে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদের ডোমকলে (Domkal)! তাজ্জব ঘটনায় অবাক হয়ে গিয়েছিল গোটা পুলিশ প্রশাসন। শেষে পুলিশি তৎপরতায় উদ্ধার করা হয় ব্যবসায়ীকে, সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে গ্রেপ্তার করা হয় সিভিক ভলেন্টিয়ার সহ ৮ জনকেও। কিন্তু এবার সেই ঘটনায় নিল আরেক নয়া মোড়। অপহরণের ঘটনায় সরাসরি নাম উঠলো স্থানীয় তৃণমূল নেতার।
ঘটনাটি কী?
রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১৫ অক্টোবর রাতে ডোমকল থানার বাজিতপুর এলাকার যুবক লালচাঁদ মণ্ডল তাঁর স্টেশনারি দোকানে বসেছিলেন। সেই সময়ে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি হঠাৎ তাঁর দোকানের সামনে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে কয়েক জন যুবক দোকানের ভিতরে ঢুকে লালচাঁদকে জানায় যে থানা থেকে ডাকা হয়েছে এবং তখনই লালচাঁদকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। এদিকে রাত বাড়তে লালচাঁদ বাড়ি না ফিরলে পরিবার ডোমকল থানায় বিষয়টি জানায়। তখনই জানা যায় যে পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িতে ভুয়ো পুলিশ সেজে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর অভিযোগ পেয়েই তৎপর হন ডোমকল থানার আইসি পার্থসারথি মজুমদার। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে অপহরণ কাণ্ডের কিনারা করে ফেলে। উদ্ধার করে লালচাঁদ মণ্ডলকে।
অপহরণের সঙ্গে জড়িত শাসকদল
ডোমকলের এই ঘটনায় পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে ডোমকল থানায় কর্মরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ মোট আট জনকে। এখনও ধৃতরা জেল হেফাজতে রয়েছে। এদিকে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ুন মণ্ডল সম্পর্কে সদ্য প্রয়াত ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের খুড়তুতো ভাই। এখানেই শেষ নয় তদন্তের মাধ্যমে জানা গিয়েছে ঐদিনের অপহরণের কাণ্ডে যুব তৃণমূলের ডোমকল শহর সভাপতি সাজিবুল খান ওরফে বাপনের দুটো গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল। যে কিনা জাফিকুলের মাসতুতো ভাই। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে এই ঘটনায় স্থানীয় শাসক দল সরাসরি জড়িত। এরপরই অভিযুক্তদের জেরা করে পুলিশ অপহরণের সঙ্গে তৃণমূলের শ্রমিক নেতা সালাউদ্দিন শেখের সরাসরি যোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারে। আর তারপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার তৃণমূলের শ্রমিক নেতা
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাতে ডোমকলের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কালুপুর গ্রামে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের যুবককে অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা সালাউদ্দিন শেখকে। ডোমকলের থানার তরফে জানায়, যে গাড়িতে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই গাড়িতে ওই শ্রমিক নেতা ছিলেন। ঘটনার পরে এলাকা ছেড়ে পালানোর কারণে পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। পুলিশ ওঁত পেতে ছিল। বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরার খবর পেয়ে হানা দিয়ে পুলিশ তাঁকে ধরেছে। এদিকে এতদিন পর শ্রমিক নেতা গ্রেপ্তারে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছে দল। তৃণমূলের ডোমকল শহর সভাপতি কামরুজ্জামান মণ্ডল বলেন, “ডোমকল শহর সহ-সভাপতি হয়ে যদি সে অপহরণের মতো ঘটনায় জড়িত থাকে, তা হলে তাঁকে সাজা ভোগ করতেই হবে। কেউ অন্যায় করলে দল দেখে লাভ নেই।”
আরও পড়ুন: গ্যাস সিলিন্ডার লিক করে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড! ঝলসে গেল কলকাতা পুলিশের ASI সহ তিন
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের এই অপহরণের ঘটনায় সরাসরি কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। ডোমকল ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি তোহিদুল ইসলামের কথায়, ‘অপহরণের মামলায় নাম জড়াচ্ছে তৃণমূলের নেতা ও শ্রমিক নেতার। এর মধ্যে দিয়ে তৃণমূলের নেতাদের মুখ ও মুখোশ যে আলাদা, সেটা ডোমকলের মানুষ বুঝতে পারছেন।’ জানা গিয়েছে, গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার ধৃত নেতাকে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।












