প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: খবরের শিরোনামে বারংবার উঠে আসছে মেয়ে পাচারের একাধিক ঘটনা। এই নিয়ে অনেক কেস ফাইলও করা হয়েছে বিভিন্ন থানায়। সেক্ষেত্রে মহিলাদের এই অন্ধকার জগৎ থেকে রক্ষা করতে এবং পাচার রোধ করতে পুলিশের পাশাপাশি এগিয়ে আসছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সম্প্রতি উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinajpur) পাঞ্জিপাড়ায় নিষিদ্ধ পল্লি থেকে পাঁচজন পাচার হওয়া নাবালিকা-সহ নয় মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু সকলকে উদ্ধার করা হলেও স্থানীয় বাসিন্দা-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা হুমকি দিয়ে দু’জন নাবালিকাকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য করে পুলিশকে। যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয় এলাকায়।
পুলিশকে হুমকি স্থানীয় নেতাদের
ইটিভি নিউজ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সোমবার সন্ধ্যায় উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর গোয়ালপোখর থানার পাঞ্জিপাড়া ফাঁড়ির পুলিশ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যৌথভাবে অভিযান চালায় এক নিষিদ্ধপল্লিতে। এরপর যৌথ ও সঠিক প্রচেষ্টার ভিত্তিতে সেখান থেকে পাঁচজন পাচার হওয়া নাবালিকা-সহ নয়জন মহিলাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের অতর্কিত অভিযানে যৌনপল্লি থেকে মেয়ে উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সকলকে উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গেলেও সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা রীতিমত হুমকি দিয়ে দু’জন নাবালিকাকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য করে। আর তা জানাজানি হতেই তুমুল শোরগোল শুরু হয়েছে এলাকা জুড়ে।
দুজনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ
রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, নিষিদ্ধপল্লিতে উদ্ধার হওয়া নাবালিকাদের মধ্যে এক জন বিহারের দ্বারভাঙা ও একজন উত্তরপ্রদেশের বালিয়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রায় ৮-৯ মাস আগে অজ্ঞাত দালালেরা তাদের ভিন রাজ্যে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাঞ্জিপাড়া যৌনপল্লিতে ঢুকিয়ে দেয়। আর এই খবর পুলিশের কানে আসতেই এই উদ্ধারপর্ব চলে। কিন্তু সেখানে শাসকদলের হুমকি এক বড় অভিযোগ তুলে আনছে। অভিযোগ পাচার করা মহিলাদের উদ্ধারের পর এদিন প্রায় ৩০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মী ওই পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে ঢুকে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ পাঁচ নাবালিকার মধ্যে দু’জনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রী রাম’ না বলায় হুগলির হরিপালে মুসলিম ফেরিওয়ালাকে মারধর, দাড়ি ধরে টান!
তৃণমূল হুমকি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
পাচার হওয়া দুইজন নাবালিকাকে পুলিশের ফাঁড়ি থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তৃণমূল নেতারা দাবি করেন যে, তাঁদের পরিবার ওই এলাকাতেই থাকে। কিন্তু তাঁরা ওই মেয়েদের কোনও বৈধ নথি দেখাতে পারেননি পুলিশকে। শেষমেশ হুমকি দিয়ে ওই দুই নাবালিকাকে ছাড়িয়ে আনা হয়। এই প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য অরিজিৎ অধিকারী বলেন, “সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ইসলামপুর পুলিশ জেলা সুপারের সঙ্গে দেখা করলে একটি পুলিশ টিমকে নিয়ে যৌনপল্লিতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ওই মেয়েদের উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসলে এদিকে ১৫ মিনিটের মধ্যে কয়েকশো জনতা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে পড়ে । প্রায় ৩০ জন তৃণমূল কর্মী লাগাতার হুমকি দিতে থাকে। শেষে চাপে পড়ে পুলিশ ২ জন নাবালিকাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ওই সময় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল পুলিশ আমাদের গার্ড করে বিহার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।”