প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর দিনাজপুরের মহকুমা শহর ইসলামপুর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দাড়িভিট (Daribhit) গ্রামে। সেখানকার ইসলামপুরের দাড়িভিট হাই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ছিল প্রায় দু’হাজার। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল সেই স্কুলে উর্দু এবং সংস্কৃত শিক্ষকের যোগ দেওয়া নিয়ে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছিল যে স্কুল ভাঙচুর হওয়া থেকে শুরু করে রীতিমত গোলাগুলিও হয়েছিল। প্রাণ গিয়েছিল রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণ নামে দুই প্রাক্তন ছাত্রের। তাঁদের এই মৃত্যুতে তোলপাড় হয়ে উঠেছিল গোটা রাজ্য।
দাড়িভিট কান্ডের স্মৃতি উঠে এল
এইরূপ একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহিরাগতদের ভাঙচুর দুই ছাত্রের রহস্যমৃত্যু নিয়ে সব মিলিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইসলামপুর। সেই ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে স্কুল। গ্রামবাসীদের দাবি ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজেশ এবং তাপসের মৃত্যুর কিনারা না হচ্ছে, ততক্ষণ স্কুল বন্ধই থাকবে। সেই সময় ওই স্কুলের প্রধান ও সহকারি প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি দাড়িভিট নিয়ে একাধিক কার্যক্রম ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। যদিও পরবর্তীতে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছিল সংস্কৃত ও উর্দু ভাষার ওই দুই শিক্ষককে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ২০১৬ এর গোটা প্যানেল বাতিল হওয়ায় এবার চাকরি গেল সেই দুই শিক্ষকের।
চাকরি বাতিল দুই শিক্ষকের
সূত্রের খবর, সম্প্রতি দাড়িভিট হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শুভময় রায় এর সঙ্গে শিক্ষক বাতিল প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই আমাদের। ফলে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমার স্কুলের দু’জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। মাত্র ৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে পঠন-পাঠন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’’ এদিকে চাকরি বাতিলের খবর পেতেই খুশিতে আত্মহারা দাড়িভিট কাণ্ডে নিহত দু’জন ছাত্রের র পরিবারের সদস্যেরা। এই প্রসঙ্গে নিহতদের পরিবারের দাবি, ওরা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়ে জোর করে যোগ দিতে এসেছিল। এমন পরিণামই হওয়ার কথা।
আরও পড়ুনঃ জেলবন্দি পার্থ, ওদিকে ভাড়া দেওয়া হতে পারে তাঁর বাড়ি! তৎপরতা তুঙ্গে
এদিকে দাড়িভিট কাণ্ডে নিহত তাপসের মা মঞ্জু বর্মনও খুব খুশি ওই দুই শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায়। তিনি বলেন, ‘‘অন্যকে কাঁদিয়ে জীবনে কখনই সুখী হওয়া যায় না। জাল করে ওরা চাকরি পেয়ে যোগ দিতে এসে আমাদের দুই পরিবারে দুই সন্তানকে কেড়ে নিয়েছিল। ভগবান তার শাস্তি দিয়েছেন। একেবারে ভাতেমরছেন তাঁরা’’ অন্যদিকে মাসের প্রথম দিকে এই রায়ের কারণে রীতিমত চাপে পড়ছে সরকরি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ভারপ্রাপ্তরা। বেতনের পোর্টাল আপডেট করতে সমস্যা হচ্ছে। নিয়ম মেনে রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও পোষিত স্কুলের শিক্ষররা বেতন পান সেই মাসের শেষ দিকে। কিন্তু এপ্রিল মাসে রিকুউজিশন জমা করতেই গিয়েই সমস্যায় পড়েছেন একাধিক স্কুলের প্রধানারা।