প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই বেশ সরগরম রাজ্য রাজনীতি, এমতাবস্থায় ট্রেন নিয়ে শুরু হয়ে গেল তৃণমূল এবং বিজেপির কাড়াকাড়ি পরিস্থিতি। গত শনিবার কলকাতর সঙ্গে রেল পথের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিল উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্য মিজোরাম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন এই সাইরাং-কলকাতা এক্সপ্রেস ট্রেনের (Mizoram Kolkata Express)। আর সেই ট্রেনটি রবিবার দুপুর নাগাদ মুর্শিদাবাদ স্টেশনে পৌঁছতেই ঘটে গেল ধুন্ধুমার কাণ্ড! দুই দলের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল এলাকা জুড়ে।
ঠিক কী ঘটেছে?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাইরাং- কলকাতা এক্সপ্রেস ট্রেনকে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে স্বাগত জানানোর জন্য গতকাল অর্থাৎ রবিবার সকাল থেকেই মুর্শিদাবাদ এবং বহরমপুর স্টেশনে বিজেপির দুই বিধায়ক তাঁদের কর্মী সমর্থকদেরকে নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। সকাল থেকেই দুই স্টেশন চত্বরে বিজেপি বিধায়কের সমর্থকরা বড় বড় পোস্টারও লাগিয়েছিলেন। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মুর্শিদাবাদ পুরসভার চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিত ধর এবং মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আবু তাহের খান তাঁদের বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থকদেরকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে পৌঁছে যান ট্রেনটিকে স্বাগত জানাতে। ফলে উত্তেজনা ছিল চরমে তাই স্টেশনে বিপুল সংখ্যায় জিআরপি, আরপিএফ এবং মুর্শিদাবাদ থানার পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
গার্ডকে সংবর্ধনা দিতে পারেনি গেরুয়া শিবির
এদিকে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে সাইরাং- কলকাতা এক্সপ্রেস ট্রেন আসার অপেক্ষায় দু’টি রাজনৈতিক দল তৃণমূল এবং বিজেপি অপেক্ষা করছিল। এমতাবস্থায় দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে হঠাৎ করেই শুরু হয়ে গেল সংঘর্ষ- হাতাহাতি। এদিকে এই ধুন্ধুমার পরিস্থিতির মাঝেই এক্সপ্রেস ট্রেনটির ওই স্টেশনে দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ায় চালক হুইসেল বাজিয়ে ট্রেনটিকে নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। এর ফলে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে বিজেপির সমর্থকরা ট্রেনের ড্রাইভার বা গার্ডকে সংবর্ধনা দিতে পারেননি। বিজেপির অভিযোগ, সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য বিজেপি নেতাদেরকে ট্রেনের ইঞ্জিনে চালক এবং সহকারী চালকের কাছাকাছি যেতে দেয়নি তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। এমনকি মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরিশঙ্কর ঘোষকে ধাক্কাধাক্কি করার অভিযোগ উঠেছে।
পাল্টা অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের!
এদিন তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকায় চুপ থাকেনি তাঁরাও। সাইরাং- কলকাতা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘গাজোয়ারি’ করার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, “মুর্শিদাবাদ স্টেশনে কোনও ঘটনাই ঘটেনি। বিজেপি গোটা বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করছে।” তিনি আরও বলেন যে,, “ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ স্টেশনে প্রবেশের পর আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে এসে ইঞ্জিনটি এসে থামে। সেই সময় স্টেশনে আমাদের প্রচুর সমর্থক থাকায় বিজেপির কর্মী সমর্থকরা ধাক্কাধাক্কি করে সময়মতো সেখানে এসে পৌঁছাতে পারেননি। আমাদের দলের কোনও কর্মী সমর্থক বিজেপির কোনও কর্মী বা নেতাকে মারধর করেনি। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
আরও পড়ুন: দুর্নীতি প্রাণ কাড়ল আরেকজনের! SSC পরীক্ষার আগের দিনই মৃত্যু চাকরিহারা শিক্ষকের
প্রসঙ্গত, কলকাতা স্টেশন থেকে সাইরাং- কলকাতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহে তিন দিন দুপুর ১২.২৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে, যা পরের দিন সন্ধা ৭.৪৫ মিনিট নাগাদ মিজোরামের সাইরাং স্টেশনে পৌঁছায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ঠিক হয়েছে কলকাতা থেকে ট্রেনটি শনিবার ,মঙ্গলবার এবং বুধবার যাত্রা করবে। উল্টো দিকে সাইরাং স্টেশন থেকে কলকাতার দিকে ট্রেনটি সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার যাত্রা করবে। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ উদ্বোধনী ট্রেনটি মিজেরামের বৈরাবি ষ্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে কলকাতা স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ট্রেনটি নশিপুর ব্রিজ পার হয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ মুর্শিদাবাদ স্টেশনে এসে পৌঁছায়। তারপরেই ঘটে যায় ধন্ধুমার কাণ্ড।