প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যের শিক্ষার হাল নিয়ে বরাবরই প্রশ্নের মুখে ওঠে। SSC নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, সবেতেই বদনাম রাজ্য সরকারের। যে শিক্ষক শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের পথ দেখায়, আজ তাঁরাই নিজেদের হকের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। খুবই খারাপ পরিস্থিতি রাজ্যের অন্দরে। এমতাবস্থায় শিক্ষক পেটানোর আরও একটি অভিযোগ উঠে এল কাকদ্বীপে (Kakdwip)। স্কুলের ভিতরে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে উদোম মারধরের অভিযোগ উঠল শাসক দলের নেতার বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি কী?
ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপের বীরেন্দ্র বিদ্যানিকেতন স্কুলে সেখানকার স্থানীয় তৃণমূল নেতার গুন্ডামি ইতিমধ্যেই ভয় ধরিয়েছে গোটা স্কুল চত্বরে। অভিযোগ, স্কুলের ভিতরে ঢুকে পড়ুয়াদের সামনেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মারধর, ঘাড়ধাক্কা দেয় সেখানকার শাসক দলের নেতা। রীতিমত তাড়া করে স্কুলেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। শেষে স্কুল থেকে বের করে এসডিপিও অফিস পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনায় অভিযুক্ত স্কুলের পরিচালক সমিতির সভাপতি। এই ধরনের জঘন্য ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস।
প্রতিবাদের পথে নামল হেডমিস্ট্রেসেস সংগঠন
অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি কাকদ্বীপের বীরেন্দ্র বিদ্যানিকেতন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে এইরূপ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ”এটি একজন শিক্ষককে তাঁর কর্মস্থলে আক্রমণ করার জঘন্য ঘটনা। আমরা দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত দোষীদের শাস্তি দিয়ে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।” তাঁদের আরও দাবি, “রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি ও অসামাজিক উপাদান শিক্ষাঙ্গনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। তাই অবিলম্বে এমন ব্যক্তিদের স্কুল-কলেজ থেকে দূরে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
আরও পড়ুন: ‘নেপাল থেকে শিক্ষা নাও, ২০২২ সালের টেটের নিয়োগ দাও’ বাঁকুড়ায় শিক্ষিত যুবদের হুঙ্কার
উল্লেখ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শিক্ষিকাদের অসন্মান করার এই ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। সম্প্রতি পাড়ায় মদের আসরের প্রতিবাদ করে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক অঙ্কন শিক্ষক। লাথি, ঘুসি থেকে মাটিতে ফেলে মার, বাদ যায়নি কিছুই। রক্তাক্ত শিক্ষককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে সূর্যকান্ত মিশ্রর অধ্যাপিকা কন্যার হেনস্থাকাণ্ডে বিতর্কে জড়িয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। শুধু তাই নয়, মালদার সামসি কলেজের টিএমসিপি নেতা তাজমুল হকের বিরুদ্ধে অধ্যাপিকাকে ধর্ষণ ও খুনের হুমকির অভিযোগ উঠে ছিল। এবার দেখার পালা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।