প্রীতি পোদ্দার, তমলুক: বাংলায় একের পর এক হারের মুখ দেখেই চলেছে বিজেপি। রাজ্যের গত বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল BJP। আর তাতে বার বার অভিযোগ উঠে আসছে যে ভিতরে ভিতরে বামেদের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের যোগ রয়েছে। তাইতো একের পর এক সমবায় নির্বাচনে রাম-বামের জোটবদ্ধ ঘিরে রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছিল। কিন্তু এবার উল্টো অভিযোগ উঠে এল। জানা গিয়েছে সবুজ শিবির এবং লাল শিবির এবার জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে জয় হাঁকিয়ে আনল।
ঘটনাটি কী?
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অধীনে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের দুটি সমবায় সমিতির নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যে একটি হল নন্দকুমার ব্লকের দক্ষিণ নারকেলদা ও বেঙ্গিমুদিয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি এবং দ্বিতীয়টি হল তমলুক ব্লকের শ্রীরামপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে চংরা কালাগন্ডা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি। আর এই দুটি সমবায় নির্বাচনেই এবার গেরুয়া শিবিরকে একবারে মাটিতে ফেলে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। নন্দকুমারের দক্ষিণ নারিকেলদা- বেঙ্গিমুদিয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মোট আসন সংখ্যা ছিল ৫৫টি। যেখানে ৪৮টি আসন দখল করেছে তৃণমূল। বাকি ৭টি আসন দখল করেছে বিরোধী জোট প্রার্থীরা।
বিজেপির ঝুলিতে মাত্র কয়েকটি আসন!
অন্যদিকে তমলুক ব্লকের শ্রীরামপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের চংরা কালাগন্ডা সমবায় সমিতির পরিচালক সমিতির নির্বাচনেও বিপুল জয় লাভ করল ঘাসফুল শিবির অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস। এই সমবায়ের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৯টি। আর এই ৯ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৬ টি এবং বামেরা ৩টি আসনে প্রার্থী দেয়। ফলস্বরূপ ভোটের শেষে দেখা গিয়েছে তৃণমূল দখল করেছে ৬টি। আর বাকি মাত্র ৩ টি আসন গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। যদিও এই হার মেনে নিতে চায়নি গেরুয়া শিবির। কারণ এর আগে বেশ কয়েকটি সমবায় নির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। এমনকি পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পুরসভার নির্বাচনেও হেরেছিল বিজেপি।
আর তৃণমূলের বিপুল জয়ের ফলে তমলুক ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অর্ণব চক্রবর্তী বলেন, ‘এর থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল বিজেপির সঙ্গে মানুষ এখন আর নেই। ভোট হলেই তৃণমূলের পাশে আছে মানুষ। মা মাটি মানুষ এই ভাবেই সকলের পাশে থাকবে। এবং উন্নয়ন চলতে থাকবে।’ অন্যদিকে পাল্টা তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সহ সভাপতি আশিস মণ্ডল বলেন, ‘ভোটার তালিকায় কারচুপি, প্রশাসকদের কাজে লাগিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানোর ফলে এই ফলাফল। প্রতিবার এইভাবেই তৃণমূল এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে। তার মধ্যেও বেশ কয়েকটি আসনে আমাদের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এটাই আমাদের নৈতিক জয়।’
কেন এই হাল বিজেপির?
আর ভোটের এই ফলাফলের তাই বার বার প্রশ্ন উঠছে যে তবে কি পূর্ব মেদিনীপুরে ধীরে ধীরে বিজেপির সংগঠন ভেঙে যাচ্ছে! কারণ সম্প্রতি বিজেপির জেলা পঞ্চায়েত যেখানে বিজেপির হাতে ছিল সেটি এখন চলে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে। আর এবার এখানকার সমবায় নির্বাচনেও ধরাশায়ী হল বিজেপি। যদিও এখানের বিজেপি নেত্রী অন্য অভিযোগ করেন। তাঁর মতে, ‘এই সমবায় সমিতিতে প্রায় ১২ বছর ভোট হয়নি। অনেকদিন পর নির্বাচন হল। আর তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরা বাইরে থেকে লোক এনে সন্ত্রাস চালিয়েছে।’