প্রীতি পোদ্দার: গত শনিবার, দশেরার দিন লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং-য়ের হাতে খুন হতে হয় মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকিকে। আর তাঁর এই মৃত্যুর পর থেকেই মুম্বইয়ে অলিতে গলিতে তৈরি হয় আতঙ্কের পরিবেশ। কিছুটা কেঁপে ওঠে বলিউডও। তাঁর মৃত্যুর দায় স্বীকার করে নেয় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং এর সদস্যরা। এই সেই গ্যাং যে কিনা এর আগে একাধিকবার সলমান খানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। বাবা সিদ্দিকিকে খুন করার পরেই সলমান খানকে কড়া বার্তা প্রেরণ করা হয়।
সিদ্দিকির হত্যার দায় স্বীকার লরেন্স গ্যাংয়ের
জানা গিয়েছে, বাবা সিদ্দিকির মৃত্যুর দায় স্বীকার করে নিয়ে সলমানকে গত রবিবার একটি নয়া বার্তা দেয় লরেন্স গ্যাং। সলমান খানের উদ্দেশ্যে তাঁরা বলেন, “সলমান খান, আমরা এটা চাইনি। তুমিই তোমার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী। কারোর সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। কিন্তু সলমান খান, দাউদকে যে যে সাহায্য করবে, তারা তৈরি থাকো।” কিন্তু জানেন কি ঠিক কী কারণে সলমানের উপর এত রাগ লরেন্সের? কেনই বা তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলতে চায় তাঁরা?
তবে শুধু বাবা সিদ্দিকী নয় সিধু মুসেওয়ালা, করনি সেনা প্রধান সুখদেব সিং গোগামেদীকেও খুন করার দাবি করেছিল লরেন্সের গ্যাং। কারণ তাঁরা সকলেই সলমন ঘনিষ্ঠ ছিলেন। একদিক থেকে এই খুন করার পিছনে লরেন্স গ্যাং এর অন্যতম কারণ ছিল এইভাবে সলমন এর ঘনিষ্ঠকে খুন করে ভাইজানকে চাপে রাখা। জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে প্রথম সলমনকে খুনের হুমকি দিয়ে ইমেইল মারফৎ চিঠি পাঠিয়েছিল লরেন্স বিষ্ণোই। এর পরের বছর ফের ২০২৩ সালে ইমেইল মারফত দেওয়া হয় হুমকি। অবশেষে এই হুমকি চিঠি পেয়ে বান্দ্রা পুলিস স্টেশনে অভিযোগ জানাতে যায় ভাইজান। তবে হুমকিতেই থেমে থাকেনি গ্যাং। সলমন খানের বাড়ির সামনে দুই ব্যক্তি এসে গুলি চালিয়ে এক ভয়ংকর আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান তাঁরা। যান। তখন থেকেই প্রকাশ্যে আসতে থাকে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সলমন হত্যার পরিকল্পনার কথা।
কেন লরেন্স গ্যাংয়ের হিট লিস্টে সলমন?
জানা গিয়েছে ১৯৯৮ সাল থেকেই লরেন্স গ্যাংয়ের মূল মাথা বিষ্ণোইয়ের হিট তালিকায় রয়েছেন সলমন খান। কারণ সেই বছর যখন রাজস্থানে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শ্যুটিংয়ে গিয়েছিলেন সেখানে একটি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেন সলমন খান। আর এই শিকার তাঁর জীবনে ভয়ংকর অন্ধকার নামিয়ে আনে। জানা গিয়েছে সেখানকার বিষ্ণোই গ্যাং কৃষ্ণসার হরিণকে সর্বদা মাতৃ রূপে পূজা করে। আর এই কৃষ্ণসার হরিণের এইরূপ পরিণতি সকলের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সেই সময় লরেন্সের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। কিন্তু তখন থেকেই সলমনকে খুন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল লরেন্স। যদিও তার জন্য জেলমুখী হতে হয়েছিল সলমনকে।
Why Lawrence Bishnoi Wants To Kill Salman Khan
কিন্তু দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর, অবশেষে ২০১৬ সালে রাজস্থান হাইকোর্ট সলমানকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। আসলে অভিযোগের ভিত্তিতে খানের বিরুদ্ধে কোনো পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে আইনের চোখে ছাড়া পেলেও লরেন্স গ্যাং এর থেকে নিস্তার নেই তাঁর। এক সংবাদ সংস্থা মারফৎ অনেক বছর আগে লরেন্স বিষ্ণোই এর সঙ্গে অনলাইনে সাক্ষাৎকার পর্ব এর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে লরেন্সকে বলতে শোনা যায় যে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হল সলমন খানকে হত্যা করা। এর সঙ্গে ক্ষমা করার উপায়ও তিনি বলে দেন। একমাত্র যদি সলমন খান মুকাম মুক্তিধাম মন্দিরে গিয়ে যদি তিনি ক্ষমা চান, তাহলে সব সমাধান হবে।
সলমনকে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদের
এ বার সলমনকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার নিদান দিলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ হরনাথ সিংহ যাদব। এদিন তিনি এক্স হ্যান্ডেলে সলমন খানকে ট্যাগ করে লিখেছেন, ‘‘প্রিয় সলমন খান, যে কৃষ্ণসার হরিণকে বিষ্ণোই সমাজ দেবতা মনে করে পুজো করে, আপনি তাকে শিকার করেছেন এবং মাংস রান্না করে খেয়েছেন। এতে বিষ্ণোই সমাজের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। আপনি বড় অভিনেতা, দেশের এত মানুষ আপনাকে সম্মান করেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি বিষ্ণোই সমাজের কাছে নিজের এই ভুলের জন্য আপনার ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত।’’