অসমের পর এবার বিহারে! আদানিকে ১ টাকার বিনিময়ে ১৯০০ বিঘা জমি দিল BJP?

Published on:

Updated on:

Gautam Adani

এখনও মেটেনি অসমের ৩০০০ বিঘা জমি সম্পর্কিত বিবাদ। এবার তার মধ্যেই জোর আলোচনায় বিহারের প্রায় ১৯০০ বিঘা জমি। কারণ, সম্প্রতি জানা গিয়েছে, বিহার স্টেট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ভাগলপুরের পীরপৈন্তিতে একটি ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায়। এবং সেই উদ্দেশ্যে সংস্থার তরফ থেকে ভারতের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে একটি লেটার অফ ইন্টেন্ট অর্থাৎ বায়না দেওয়া হয়েছে। এবং গৌতম আদানির (Gautam Adani) মালিকানাধীন এই গ্রুপ, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

আপনারা অনেকেই এখনও পর্যন্ত এই বিষয়টিকে খুবই উন্নয়নমূলক একটি কাজ হিসাবে মনে করছন। কিন্তু, আবার এটাও ভাবছেন, যে তবে এর সাথে অসমের ৩০০০ বিঘা জমির কী সম্পর্ক? বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিহারের এই ১,২০০ একর অর্থাৎ প্রায় ১৯০০ বিঘা জমি,  শিল্পপতি আদানির কাছে একর পিছু মাত্র ১ টাকায় হস্তান্তর করা হয়েছে। হ্যাঁ, মাত্র ১ টাকায়! আর অন্যদিকে অভিযোগ, যারা এই জমির আসল মালিক তাদের ভয় দেখিয়ে, চাপ দিয়ে, একপ্রকারভাবে তাদের সাথে প্রতারণা করে তাদের জমি কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ১২০০ একরের মধ্যে ১০২০ একর জমি নেওয়া হয়েছে ৯১৫ জন কৃষকদের কাছ থেকে, এবং বাকি জমি রেল এবং সরকারি।

আসল সত্যিটা কী? আদতে উন্নয়নমূলক? নাকি সবটাই ভাঁওতাবাজি, উন্নয়নমূলক প্রকল্পের নামে? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

বিরোধী দলের বক্তব্য!

বিহার সরকারের তরফ থেকে আদানি গোষ্ঠীকে এই জমি দেওয়া নিয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের মিডিয়া এবং পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্ট অর্থাৎ যোগাযোগ বিভাগের প্রধান পবন খেরা ১৫ সেপ্টেম্বর সর্বভারতীয় কংগ্রেসের হেডকোয়ার্টারে একটি প্রেস কনফারেন্স করে বলেন, “বিহারের ভাগলপুরের পীরপৈন্তিতে, ১০ লক্ষ গাছ এবং ১,০৫০ একর জমি ‘রাষ্ট্র সেঠ’ গৌতম আদানিকে প্রতি বছর পিছু ১ টাকায় ৩৩ বছরের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য দেওয়া হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহার সফরে এসেছেন, তাই সেখানকার গ্রামবাসীদের গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে যাতে তারা প্রতিবাদ করতে না পারে।”

গ্রামবাসীদের মতামত

এই বিষয়ে নয়াদিল্লির সাংবাদিক রাঘব ত্রিবেদীর একটি গ্রাউণ্ড রিপোর্টিংয়ে বিহারের এই জমি সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, হরিণকোলের মতো গ্রামের বাসিন্দাদের নাকি ক্ষতিপূরণই দেওয়া হয়নি।

ওই গ্রাউণ্ড রিপোর্টিংয়ে একাধিক ব্যাক্তি নিজেদের কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, যে তাদের জমি একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে, আবার অন্যদের সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিমাণ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন যে কীভাবে তারা ওই জমির উপর নির্ভরশীল। একাধিক গ্রামবাসীদের চুপ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি গ্রামের কৃষকরা যখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনলাইনে কথা বলার সময়ে নিজেদের অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করেন, তখনও সেই সমস্ত ব্যাক্তিদের নিজেদের গ্রামেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

কিছু গ্রামবাসী জানিয়েছেন, যে তাঁরা এই জমি অধিগ্রহণ করার কোনও অনুমতি দেয়নি, তবে তাঁদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। কারোর দাবি, প্রায় বারো বছর আগের দামে জমির দাম দেওয়া হচ্ছে।

গ্রামের গরীব কৃষকদের পাশাপাশি এই জমি অধিগ্রহণ প্রাকৃতিক পরিবেশের উপরেও ফেলবে মারাত্মক প্রভাব, কারণ এই প্রকল্পটি এমন একটি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে হাজার হাজার ফলদায়ক এবং বিভিন্ন ধরনের কাঠের গাছ রয়েছে, যা ওই দরিদ্র পরিবারগুলিকে আয় এবং জীবিকা উভয়ই প্রদান করে।

অনেকে এও জানিয়েছে যে সরকার এই উর্বর জমিগুলিকে “অনুর্বর” হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং উন্নয়নের নামে ব্যাপক বনানি কেটে পরিষ্কার করেছে।

সরকারের মন্তব্য!

কিন্তু সরকারের তরফ থেকে ১ টাকায় জমি দেওয়ার কোনও রকম তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সরকারের তরফ থেকে আগামী ৩৩ বছরের জন্য লিজে জমি দেওয়ার বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হলেও সরকার কিংবা আদানি কারোর তরফ থেকেই একর পিছু ১ টাকার বিনিময়ে জমি দেওয়ার কোনও তথ্য সামনে আসেনি।

বিহারের স্টেট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিহারের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং শিল্প প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অর্থাৎ, নয়া এই প্ল্যান্ট গঠন হলে রাজ্যের অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনই বাড়বে রাজ্যের কর্মসংস্থান। অন্যদিকে, রাজ্যে বিদ্যুতের ঘাটতি কমিয়ে ভবিষ্যতে জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারে এই প্রকল্প। এছাড়া বড় এই প্রকল্পের ফলে রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা, রেল এবং জলের ব্যবস্থা উন্নত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেরই দ্বিচারিতা করছেন না তো প্রধানমন্ত্রী? কারণ, ২০২৪ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী “এক পেড় মাকে নাম” নামের একটি প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে ২০২৫ সালের ৪ঠা জুন অবধি আমাদের দেশে এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১৪০ কোটির বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু, বিহারে এই প্ল্যান্ট উদ্বোধন হলে কাটা হতে পারে প্রায় ১০ লক্ষ ছোট-বড় নানা ধরনের গাছ! ফলে অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে পরিবেশ, সেকথা বলাই বাহুল্য।

গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্যJoin Group
চাকরির খবরের জন্যJoin Hood Jobs
রাশিফলের জন্যJoin Hood Rashifal
খেলার খবরের জন্যJoin Whatsapp
সঙ্গে থাকুন ➥