২০২৫ এ কত তারিখে পড়ছে কার্তিক পূজা? রইল সময়সূচী, তিথি নক্ষত্র ও পূজার নিয়ম

Published:

Kartik Puja 2025 Date And Time
Follow

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে কার্তিক পূজা কত তারিখে (Kartik Puja 2025), কখন হবে পূজো, আসল সময়সূচি বা তিথি কখন, তা জানতে ইচ্ছুক বহু বাঙালিই। কারণ বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পর আসে জগদ্ধাত্রী পুজো। তারপর ঘটা করে আয়োজন করা হয় কার্তিক পুজোর। কারণ, হিন্দু ধর্মে কার্তিক পুজোকেও সমান গুরুত্বের সঙ্গেই পালন করা হয়। তবে ২০২৫ সালের কার্তিক পূজা কবে? তিথি নক্ষত্র কী রয়েছে? পূজার নিয়মই বা কী রয়েছে? বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের প্রতিবেদনটির উপর।

কার্তিক পূজা ২০২৫ তারিখ ও সময়সূচী | Kartik Puja 2025 Date And Time

বিশুদ্ধ শুদ্ধি পঞ্জিকা অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে কার্তিক পূজা পড়ছে ইংরেজি ১৭ নভেম্বর, সোমবার। বাংলা তারিখ হিসেবে ১৪৩২ সনের ৩০ কার্তিক। সাধারণত কার্তিক মাসের শেষ দিনেই কার্তিক পুজো হয়। আর সেই সূত্রে এবছরও ঠিক কার্তিক মাসের শেষ দিনেই ঘটা করে আয়োজন করা হবে কার্তিক পূজার।

কার্তিক পূজা ২০২৫ তিথি | Kartik Puja Tithi

পঞ্জিকা বলছে, ২০২৫ সালের কার্তিক পূজার জন্য আগামী ১৭ নভেম্বর, সোমবার বিকেল ৫:০৮ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬:৪৮ মিনিট পর্যন্তই শুভ। আবার রাত ৮:১৫ থেকে ১০:১১ মিনিট পর্যন্ত শুভ সময় বিরাজ করছে। এই সময় যদি কার্তিক পুজো করা হয় তাহলে কৃপাবর্ষণ হয় বলে বিশ্বাস।

কার্তিক পূজার ইতিহাস

কার্তিক পূজার ইতিহাস ঘাটতে গেলে সে অনেক দীর্ঘ হবে। তবে কার্তিক পূজা মূলত করা হয় সন্তান লাভের জন্য। বিশেষ করে পুত্রসন্তান কামনার জন্য এই কার্তিক পূজার আয়োজন। তবে বলে রাখি, পুরানে কথিত রয়েছে, কার্তিক ছিলেন মহাপরাক্রমশালী যোদ্ধা। তারকাসুরকে বধ করা দেবতাদের পক্ষে যখন সম্ভবপর হয়ে উঠছিল না, ঠিক সে সময়ই শক্তির অধিকারী কার্তিক তাকে নিধন করেছিলেন। সেখান থেকেই তিনি দেব সেনাপতি হিসেবে পূজিত হচ্ছেন। তাকে পূজা করলেই সন্তান লাভ হয় বলে বিশ্বাস।

কার্তিক পূজার নিয়ম ও আচার

কার্তিক পূজার সময় অবশ্যই কিছু নিয়ম মানতে হয়। প্রথমত, কার্তিক ঠাকুরের সামনে একটি বাচ্চাদের নতুন জামা রেখে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শিশুদের সৌভাগ্য সঞ্চার হয়। দ্বিতীয়ত, ঠাকুরের সামনে বাঁশি, তীর ধনুক এবং ময়ূরের পালক রেখে দিন। তৃতীয়ত, পূজার শেষে ঠাকুরের সামনে রাখা ময়ূরের পালক সন্তানের পড়াশোনার স্থানে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করুন। চতুর্থত, কার্তিক পূজার দিন সকালবেলায় তুলসী গাছের পুজো করার চেষ্টা করুন। এতে পরিবারের মঙ্গল কৃপা হয়। পঞ্চমত, বাচ্চাদের প্রিয় খেলনা কার্তিক পূজার স্থান দেখে দিন। এতে শিশুদের মধ্যে আনন্দ বৃদ্ধি পায়। ষষ্ঠত, সন্ধ্যাবেলায় তুলসী মঞ্চে একটি ঘি’র প্রদীপ জ্বালানোর চেষ্টা করুন এবং পুজোয় ঠাকুরকে পাঁচটি গোটা ফল ও পায়েস নিবেদন করার চেষ্টা করুন। এগুলি করলে পরিবারে সুখ-শান্তি ফিরে আসে এবং অর্থাভাব দূর হয়।

কার্তিক পূজার মন্ত্র

কার্তিক পূজার ধ্যান এবং প্রণামের জন্য আলাদা আলাদা মন্ত্র রয়েছে। দেবতার ধ্যান মন্ত্রটি হল—

“ওঁ কার্ত্তিকেয়ং মহাভাগং ময়ুরোপরিসংস্থিতম্।
তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভং শক্তিহস্তং বরপ্রদম্।।
দ্বিভুজং শক্রহন্তারং নানালঙ্কারভূষিতম্।
প্রসন্নবদনং দেবং কুমারং পুত্রদায়কম্।।”

আর কার্তিক দেবতার প্রণাম মন্ত্রটি হল—

ওঁ কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন।
প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন।
রুদ্রপুত্র নমস্ত্তভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।
ষান্মাতুর মহাভাগ তারকান্তকর প্রভো।
মহাতপস্বী ভগবান্ পিতুর্মাতুঃ প্রিয় সদা।
দেবানাং যজ্ঞরক্ষার্থং জাতস্ত্বং গিরিশিখরে।
শৈলাত্মজায়াং ভবতে তুভ্যং নিত্যং নমো নমঃ।।”

এই মন্ত্র দিয়ে যদি কার্তিক দেবতাকে তুষ্ট করা হয় এবং পূজা করা হয়, তাহলে সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলেই বিশ্বাস।

ঘরে বসে কীভাবে কার্তিক পূজা করবেন?

অনেকেই বাড়িতে কোনও পুরোহিত ছাড়াই কার্তিক পূজা করে থাকেন। আবার পুরোহিত অথবা ব্রাহ্মণ দিয়েও অনেকে কার্তিক পূজা করতে চান। তবে পুরোহিত দিয়ে পূজা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে পূজা করার জন্য অবশ্যই সেই স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। তারপর একটি জল চৌকি বসাতে হবে। তারপর জলচৌকি বা বেদীর উপর লাল কাপড় পেতে তার উপর আতপ চাল, দূর্বা ঘাস ও গঙ্গার জল ছেটাতে হবে। এরপর কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি বা ছবি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তারপর উপযুক্ত স্থানে পূজার ঘট স্থাপন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের মধ্যে নেই শ্রীকৃষ্ণর নাম! দেখুন বাকিদের তালিকা

জেনে রাখা ভাল, ঘটটি অবশ্যই পিতল বা কাঁসার হতে হয়। তারপর সিঁদুরের স্বস্তিক চিহ্ন আঁকতে হবে। এরপর পাঁচটি পাতাযুক্ত আমের পল্লব দিতে হবে। এরপর ঘটের উপর একটি ডাব রাখতে হবে এবং সিঁদুর চন্দনের ফোটা দিতে হবে। সবশেষে ডাবের উপর লাল বস্ত্র দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। এরপর যথাস্থানে ধূপ, প্রদীপ, ফুল নৈবিদ্য রাখতে হবে। সাথে গঙ্গাজলও রাখতে হবে। তারপর ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করে মন্ত্র পাঠ করতে হব। উপরে যে মন্ত্রটি বলা হল সেটি অবশ্যই ধ্যান এবং প্রণামের সময় উচ্চারণ করতে হবে। সবশেষে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রদীপ এবং ধূপ দেখিয়ে আরতি সম্পন্ন করতে হবে এবং শেষে প্রসাদ বিতরণ করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join