সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের (10 Avatars of Lord Vishnu) নাম তো আমরা সবাই শুনেছি। তাঁর প্রত্যেকটি অবতারই পরম সত্যের বিভিন্ন রূপ, যিনি যুগে যুগে ধর্ম এবং বিশ্বকে রক্ষা করার জন্যই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তবে সবথেকে বড় ব্যাপার, ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের কোনও নাম নেই। কিন্তু বাকি অবতারগুলি কী কী? বিশদে জানুন আজকের প্রতিবেদনে।
১) মৎস্য অবতার
ভগবান বিষ্ণুর প্রথম অবতার মৎস্য। এই অবতার সত্য যুগে বিষ্ণু রূপে আবির্ভাব হয়েছিল। পুরান মতে, পৃথিবীর প্রথম মানুষকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভগবান বিষ্ণু মৎস্য রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর শরীরের উপরের অংশ পুরুষ মানুষের মতো, কিন্তু নীচের অংশটা ছিল সম্পূর্ণ মাছের মতো।
২) কূর্ম অবতার
কূর্ম হল ভগবান বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার। সত্য যুগে বিষ্ণু মূলত এই কূর্ম অবতার রূপেই আবির্ভূত হন। পুরানে বলা হয় যে, সমুদ্র মন্থনের সময় মন্দর পর্বত সমুদ্রের নীচে একপ্রকার ঢুকে যাচ্ছিল। আর ঠিক সেই সময় বিষ্ণু কূর্ম অবতার অর্থাৎ কচ্ছপের রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তার পৃষ্ঠে ধারণ করেছিলেন। এর ফলেই অমৃত প্রাপ্তি সম্পন্ন হয়। সে কারণে কূর্ম অবতারকে বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার বলা হয়।
৩) বরাহ অবতার
বরাহ অবতার বলতে বুনো শূকরের রূপ ধারণ করেছিলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণু। আর এটিই তার তৃতীয় অবতার। বরাহ অবতারের রূপ ধারণ করে তিনি সত্য যুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন। পুরানে কথিত রয়েছে, পৃথিবীকে হিরণ্যাক্ষ নামক মহা শক্তিশালী অসুরের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভগবান বিষ্ণু পৃথিবীতে এই অবতার রূপে ফিরে এসেছিলেন। অসুর পৃথিবীকে মহাজগতিক সমুদ্রের নীচে একপ্রকার লুকিয়ে রেখেছিল। আর বরাহ রূপী বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করেছিল এবং মারধর করেছিল। তারপর পৃথিবীর মহাজগতিক সমুদ্রের নীচ থেকেই সেই মহান বরাহকে তুলে আনেন। তাই প্রলয়ের পর পৃথিবীর নতুন জন্মের প্রতীক হিসেবে এই বরাহ অবতারকে মানা হয়।
৪) নৃসিংহ অবতার
ভগবান শ্রীবিষ্ণুর চতুর্থ অবতার হল নৃসিংহ। এটিকে নরসিংহ বলেও ডাকেন অনেকে। অর্থাৎ, অর্ধেক মানব আর অর্ধেক সিংহ। সত্য যুগে এই অবতার রূপে ভগবান শ্রীবিষ্ণু আবির্ভূত হয়েছিলেন। রাক্ষস হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত। আর হিরণ্যকশিপু ছিলেন মূলত বিষ্ণু বিরোধী। কারণ, তার ভাই হিরণ্যাক্ষকে বিষ্ণু বরাহ রূপে বধ করেছিলেন। পাশাপাশি হিরণ্যকশিপু তার পুত্র প্রহ্লাদকে বিষ্ণুর ভক্ত হওয়ায় সাজা দিতে চেয়েছিল। শেষমেষ নৃসিংহ অবতার রূপে বিষ্ণু অবতীর্ণ হয়ে তিনি হিরণ্যকশিপুকে বধ করেন।
৫) বামন অবতার
ভগবান বিষ্ণু একসময় বামন রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এটি মূলত তার পঞ্চম অবতার। অসুর বলিকে দমন করার উদ্দেশ্যে বামন অবতার হিসেবে বিষ্ণু জন্ম নিয়েছিলেন। সে সময় অসুর অধিপতি নামের একটি যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেখানে বামন হিসেবে হাজির হয়ে বিষ্ণু তিন পা রাখার মতো জমি চেয়েছিলেন। এরপর বলি বামনকে জমি দিতে রাজি হয়ে যান। তারপর বামন তার দেহ বাড়িয়ে বিশালাকার বিষ্ণুর রূপ ধারণ করেন এবং স্বর্গ ও মর্তজুড়ে দুই পা রেখেছিলেন।
৬) পরশুরাম অবতার
ভগবান শ্রীবিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার হল পরশুরাম। ক্রেতা এবং দ্বাপর যুগ মিলিয়েই তিনি মূলত অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পরশুরাম ছিলেন ব্রাহ্মণ জমদগ্নি ও ক্ষত্রিয় রেনুকার পুত্র। পরশুরাম কঠোর তপস্যা করে শিবের থেকে যুদ্ধবিদ্যা শিখেছিলেন। আর তার প্রথম যোদ্ধা ছিলেন সন্ত। পুরানে কথিত রয়েছে, সমুদ্রের হাত থেকে তিনি মালাবার এবং কোঙ্কণকে রক্ষা করেছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সে সময় এই পরশুরাম অবতার হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
৭) রাম অবতার
রাম হলেন ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। ক্রেতা যুগে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন। রাম লঙ্কাধিপতি রাবণকে বধ করে স্ত্রী সীতাকে রাবণের হাত থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এই সমস্ত বিষয় আমরা মহাকাব্য রামায়ণে বিস্তারিতভাবেই পড়েছি। তাই এ সম্বন্ধে আর সেরকম কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।
৮) বলরাম অবতার
দ্বাপর যুগে অন্যায়ের হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য ভগবান শ্রীবিষ্ণু বলরাম রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসেবে এই বলরামকে মানা হয়। তবে বলরামের ভ্রাতা কৃষ্ণকে আবার অনেকে বিষ্ণু অবতার হিসেবে মানেন। এ নিয়ে বহু মতভেদ রয়েছে। শ্রীমদ্ভগবত গীতা অনুসারে অষ্টম অবতার হিসেবে বলরামকে মনে করা হয়। কারণ, গীতা অনুযায়ী কৃষ্ণ স্বয়ং ঈশ্বর। কোনওরকম অবতার নয়।
৯) বুদ্ধ অবতার
গৌতম বুদ্ধকে বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবেই মানা হয়। কলিযুগে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তবে এই অবতার নিয়েও নানা রকম মতভেদ রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ৪ নাকি ৫ নভেম্বর, ২০২৫ সালে কার্ত্তিক পূর্ণিমা কত তারিখে পড়ছে? জেনে নিন দিনক্ষণ ও নিয়মকানুন
১০) কল্কি অবতার
ভগবান বিষ্ণুর শেষ অবতার অর্থাৎ ১০ অবতারের মধ্যে সর্বশেষ অবতার হল কল্কি। কলিযুগের শেষে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন বলেই অনুমান করা হয়। পুরানে কথিত রয়েছে, সাদা ঘোড়ায় তলোয়ার হাতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণু কল্কি রূপে। আর তিনি কলিযুগের অবসান ঘটিয়ে আবারও সত্যযুগে সূচনা করেছিলেন।












