সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দুর্গাপূজার রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলায় শুরু হয় নতুন দেবীর আরাধনা জগদ্ধাত্রী পূজা (Jagadhatri Puja 2025)। হ্যাঁ, একসময় শুধু মাত্র রাজবাড়ী আর সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলির মধ্যে এই পূজা সীমাবদ্ধ থাকলেও আজ জগদ্ধাত্রী হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উৎসব। চন্দননগর, কৃষ্ণনগর থেকে শুরু করে উড়িষ্যা, ঝড়খণ্ডের একাধিক স্থানেও এই পূজা হয়। তবে এ বছর কবে পড়ছে জগদ্ধাত্রী পূজা? চলুন বিস্তারিত জেনে নিই আজকের প্রতিবেদনে।
কে এই জগদ্ধাত্রী দেবী?
জগদ্ধাত্রী শব্দের অর্থ হলো যিনি জগৎ ধারণ করেন। তিনি হলেন দেবী দুর্গার আরেক রূপ। এক হাতে ধনুক, এক হাতে শঙ্খ, আর অন্য হাতে চক্র ও তীর নিয়ে তিনি সিংহের উপরে বসে থাকেন। তবে তার সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক হল, তার পদতলে চেপে থাকা হস্তি, যা কিনা আমাদের অহংকার নামক দৈত্যের পরাজয়কেই নির্দেশ করে। পাশাপাশি দেবীর সিংহ শক্তির প্রতীক হিসেবেই পূজিত হয়।
পুরানে কথিত রয়েছে, দেবতারা একবার অসুরদের পরাজিত করে ভীষণ গর্বে আত্মম্বরি হয়ে উঠেছিল। আর ঠিক তখন রহস্যময় নারী আবির্ভূত হয়ে তাদের গর্ব চূর্ণ করে দেয়। আর সেই রূপেই তিনি জগদ্ধাত্রী রূপে পূজিত হন। ফলে শক্তি বা সাফল্য যতই থাকুক না কেন, বিনয় এবং আত্মসম্মানের কাছে কোনও কিছুই পার পায়না।
এবছর জগদ্ধাত্রী পূজা কত তারিখে পড়ছে? | Date And Time of Jagadhatri Puja 2025 |
পঞ্জিকা ঘেঁটে জানা গেল, এবছর অর্থাৎ 2025 সালে জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু হচ্ছে 28 অক্টোবর এবং শেষ হবে 1 নভেম্বর। তবে আসল পূজার তারিখ 31 অক্টোবর, অর্থাৎ শুক্রবার। নবমী তিথি শুরু হচ্ছে 30 অক্টোবর, সকাল 10:06 মিনিটে এবং নবমী তিথি শেষ হচ্ছে 31 অক্টোবর সকাল 10:05 মিনিটে। কিন্তু হ্যাঁ, তিথির সময়, স্থান নির্ভর করবে আপনার এলাকার উপর। তাই অবশ্যই স্থানীয় পঞ্জিকা দেখে নিতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ২০২৫ সালে কবে পড়ছে ধনতেরাস? কী কী কিনবেন এদিন, কীভাবেই বা পুজো করবেন?
পূজার নিয়ম এবং আচার
জগদ্ধাত্রী পূজা সাধারণভাবে দুর্গাপূজার ধাঁচেই করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে আলাদা সৌন্দর্য ও রীতিনীতি লুকিয়ে থাকে। মৃৎশিল্পীরা দেবীর প্রতিমা তৈরি করে রাজকীয় সাজে। বিশেষ করে তার রক্তিম গাত্রবর্ণ এবং বর্ণাঢ্য অপূর্ব পোশাকে ঢাকা থাকে। এর পাশাপাশি ভক্তরা সকালে পুষ্পাঞ্জলি দেন এবং সন্ধ্যায় মন্ত্রপাঠ আর ধূপ-ধুনো দিয়ে আরতি হয়।
প্রসাদ হিসেবে থাকে নিরামিষ ভোগ। আবার অনেক জায়গায় কমিউনিস্ট ফিস্টের বা সার্বজনীন ভোজনের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরে এই পূজার সময় অসাধারণ লাইটিং, মিউজিক ও শোভাযাত্রা দেখা যায়। শেষ দিন, অর্থাৎ বিসর্জনের দিন প্রতিমা শোভাযাত্রা মাধ্যমে গঙ্গায় বা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। আর এদিনে জগদ্ধাত্রী দেবী দেবলোকে ফিরে যান।