সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: পূর্ণিমার রাত মানেই ঝকঝকে আকাশ, শান্ত-কোমল চাঁদের আলো। আর ঠিক আবহে হিন্দু ধর্মে শুরু হয় এক অনন্য আরাধনা। হ্যাঁ, আমরা কথা বলছি কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা (Kojagari Lakshmi Puja 2025) অর্থাৎ শরৎ পূর্ণিমা নিয়ে। বিশ্বাস করা হয় যে, এই রাতে লক্ষ্মী দেবী ভক্তিভরে ভক্তের ঘরে প্রবেশ করেন।
এই দিনটি শুধুমাত্র আলো নয়, বরং সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি-সৌভাগ্য সবকিছুই ঘরে ফিরে আসে। তবে প্রশ্ন থাকছে, 2025 সালে এই কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা বা শরৎ পূর্ণিমা কবে পড়ছে? পুজো করার সঠিক নিয়ম কী রয়েছে? সময়সূচী কী রয়েছে? চলুন সবটা আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করছি।
কোজাগরী পূর্ণিমা কবে?
পঞ্জিকা ঘেঁটে জানা গেল, 2025 সালে কোজাগরী পূর্ণিমা পড়ছে 6 অক্টোবর, সোমবার। আর এবছর কোজাগরী পূজার নিশীথকাল পড়ছে 7 অক্টোবর রাত 12:03 থেকে 12:52 মিনিট পর্যন্ত। আর পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে 6 অক্টোবর দুপুর 12:30 মিনিটে এবং পূর্ণিমা তিথি শেষ হবে 7 অক্টোবর সকাল 9:16 মিনিটে। পাশাপাশি চাঁদ উঠবে রাত 12:49 মিনিটে।
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার মাহাত্ম্য
কোজাগরী পূর্ণিমার রাত মানেই “কে জাগে রে!” পুরাণে কথিত রয়েছে, দেবী লক্ষী এই রাতে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন এবং কে জেগে আছে বা কে তাকে স্মরণ করছে, সেগুলি দেখেছিলেন। তিনি এই দিন তার ভক্তদের ঘরে সুখ শান্তি এবং অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে প্রবেশ করেন। শোনা যায়, সমুদ্র মন্থনের সময় দেবী লক্ষ্মীর আবির্ভাব হয়েছিল। আর তিনি লক্ষ্যের মূল পথিক। জীবনের প্রতিটি লক্ষ্যে পৌঁছতে তার অশেষ কৃপা প্রয়োজন।
কীভাবে করবেন কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা?
প্রথমত, পুজোর আগে ঘরদোর পরিষ্কার রাখাটা সবথেকে জরুরী। দ্বিতীয়ত, একটি তামার কলসিতে জল ভরে তার গলায় লাল সুতোর ফিতা বাঁধতে হবে। আর সিঁদুর দিয়ে কলসিতে স্বস্তিক আঁকতে হবে। এরপর দেবীর সামনে কলসি রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি এবং মন্ত্র পাঠ করতে হবে। তবে হ্যাঁ, “ওঁ হ্রীং ক্লীং মহালক্ষ্ম্যৈ নমঃ” মন্ত্রটি জপ করে পূজা করতে পারেন। এতে আরাধনা আরো গভীর হয়। অনেকেই এই রাতে উপবাস পালন করে এবং পুজোর শেষে কীর্তন, ভজন বা লক্ষ্মীর পদগানের আয়োজন করে। কারণ বিশ্বাস করা হয় যে, রাত জেগে আরাধনা করলে দেবী লক্ষ্মী নিজেই এসে ভক্তদের আশীর্বাদ দেন।
খাওয়া-দাওয়ার বিশেষত্ব
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার রাতে একটি বিশেষ প্রথা ক্ষীর বা দুধ-ভাত চাঁদের আলোয় রেখে পুজো করা। আর অনেকে রুপোর বাটিতে ক্ষীর রেখে চাঁদের আলোয় শুদ্ধ করে এবং দেবীকে নিবেদনও করে। এছাড়া বাংলার ঘরে ঘরে এই দিন নাড়ু, নারকেল ভাজা, তালের ক্ষীর, দুধ-চিড়ে, মিষ্টি পায়েশ, খিচুড়ি ইত্যাদি রান্না করা হয়। আর সেগুলি দেবীর ভোগ হিসেবেই দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ শ্রাবণের সোমবারগুলিতে কী কী খাবেন? ভুলেও এই জিনিসগুলি ছুঁয়ে দেখবে না
তবে সবথেকে বড় ব্যাপার, পুজোর দিন মহিলারা নিজেদের ঘরের উঠোন এবং বারান্দায় কচু পাতা বা চালের গুড়ো দিয়ে আলপনা আঁকেন। যার মধ্যে অন্যতম হল দেবী লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ। আর এই পায়ের ছাপ দিয়েই বোঝানো হয় যে, দেবী লক্ষ্মী এই পথ ধরে ঘরে প্রবেশ করবে।
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজারএই দিনটি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিকতা নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। কারণ শরতের এই পরিষ্কার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্যতে ধরা দেয়। আর এটিই বর্ষার পর প্রকৃতির নতুন রূপে ফেরা। আর এই সন্ধিক্ষণে লক্ষ্মীপূজো মানেই ঘরে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি সবকিছু একসঙ্গে ফেরা এবং আলোর বার্তা নিয়ে আসা।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |