বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ভারতীয় সমর্থকদের কাছে 2025 বর্ষের শুরুটা যথেষ্ট বিষন্নতার। গত বছর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লজ্জার পরাজয়ের পর সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে রোহিত-বিরাটদের লড়াইটা একেবারে ধরাশায়ী হয়ে গিয়েছে। জয়ের আশায় বুক বেঁধেও হাত থেকে ফসকেছে বর্ডার গাভাস্কার সিরিজ (Border-Gavaskar Trophy)। শেষ হাসি হেসেছে অস্ট্রেলিয়া। ফলত ভারতের এই দুর্ভাগ্যকে সামনে রেখেই দলের ছেলেদের দুষছেন ভারতের আবেগী সমর্থকেরা।
অজিভূমিতে ভারতের পারফরমেন্স যে একেবারেই স্বস্তিদায়ক ছিল না, সে কথা বোঝা গিয়েছিল পারথ টেস্টের পরেই। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং দাপটের কাছে মাথা ঝুঁকিয়ে একপ্রকার ভেঙে পড়েছিল ভারতীয় শিবির। তবে সেই দুর্ভাগ্যের খরা কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ভারত। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ব্যর্থতার মাঝে ক্রিকেটের সুপার পাওয়ার দলের সামনে ভারতকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল তরুণ প্রতিভারা।
তা সত্ত্বেও শেষ হাসি হেসেছে কামিন্স বাহিনী। সিডনি টেস্টে ভারতকে হারিয়ে 3-1 ব্যবধানে সিরিজ ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি 10 বছর পর বর্ডার গাভাস্কার ট্রফির শিরোপা জিতল অজিরা। তবে অস্ট্রেলিয়ার শুভদিনে পরাজয় দেখলেও ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটেছে বেশ কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটারের। টিম ইন্ডিয়ার প্রকাশিত রিপোর্ট কার্ডে প্রশংসিত হয়েছে তাঁদের অসামান্য পারফরমেন্স।
টিম ইন্ডিয়ার রিপোর্ট কার্ডে প্রশংসিত বুমরাহ
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গোটা বর্ডার গাভাস্কার সিরিজে বুমরাহই একমাত্র ভারতীয় পেসার যিনি প্রতিটি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিলেন। জসপ্রীতের কব্জির জোর প্রতিবারই শত্রু শিবিরে আঘাত হেনে উইকেটে দখল জমিয়েছে। ভেঙেছে অজিদের বড় রানের স্বপ্ন। গুঁড়িয়ে গিয়েছে লক্ষ্য ছোঁয়ার আশাও। অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রথম দিকে বুমরাহর নেতৃত্বেই পার্থ টেস্টে দুঃসময় কাটিয়েছিল ভারত। তবে প্রথম টেস্টে জয়ের পর অধিনায়কত্বের দায়িত্ব রোহিতের কাঁধে যেতেই লক্ষ্য থেকে ছিটকে যায় ভারত।
ব্রিসবেন, অ্যাডিলেডের পর রোহিতের হাত ধরে মেলবোর্ন টেস্টও হারে ভারতীয় দল। যদিও শেষ টেস্টে দলকে জয় ফেরাতে ফের বুমরাহর কাঁধেই ওঠে নেতৃত্ব। কিন্তু দুঃখের বিষয় অজানা চোটের কারণে সিডনির টেস্টের দ্বিতীয় দিনে স্টেডিয়াম ছাড়েন ভারতীয় পেসার। এরপরই আবারও দুর্দিন দেখে ভারত। সিডনি টেস্ট দখল করে 3-1 ব্যবধানে জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। তবে ভারতের পরাজয়ের মধ্যেও টিম ইন্ডিয়ায় খুশির খবর বয়ে এনেছেন সেই বুমরাহই।
শেষ টেস্টে মাঠ ছাড়ার আগে দলকে 2 উইকেট উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বলা বাহুল্য, গোটা সিরিজের নিরিখে সবচেয়ে সফল বোলার জসপ্রীত। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে মোট 32টি উইকেট ভেঙে সেরা বোলার অর্থাৎ ম্যান অফ দ্য সিরিজ হয়েছেন বুমরাহ। সেই সাথে টিম ইন্ডিয়ার রিপোর্ট কার্ডেও প্রশংসা পেয়েছেন ভারতীয় পেসার।
রিপোর্ট কার্ডে নাম রয়েছে যশস্বী জয়সওয়াল ও নীতিশ রেড্ডির
অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে যখন মাথা নুইয়েছে রোহিত-বিরাট-পন্থদের পারফরমেন্স, ঠিক সেই মোক্ষম সময়ে দলের হাল ধরেছেন যশস্বী জয়সওয়াল ও নীতিশ রেড্ডিরা। ধারাবাহিকভাবে না হলেও প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই টিকে থেকে বড় রানের খোঁজ করেছিলেন যশস্বীরা।
যেখানে রোহিত বিরাটদের পর শুভমন গিলের মতো ধুরন্ধর ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছিল, সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মেলবোর্ন টেস্টে শতরান হাঁকিয়েছেন রেড্ডি। একই টেস্টে পরপর 2 ইনিংসে 80 রানের গন্ডি ছাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়াকে যোগ্য জবাব দিয়েছেন জয়সওয়ালও। আর সেই কারণেই টিম ইন্ডিয়ার রিপোর্ট কার্ডে ঠাঁই হয়েছে দুই তরুণ তুর্কির।
উল্লেখ্য, ভারতের রিপোর্ট কার্ডে বুমরাহ-রেড্ডি-জয়সওয়ালরা প্রশংসা পেলেও খারাপ পারফরমেন্সের কারণে শিরোনাম তো দূর সেভাবে আলোচনাতে আসেননি রোহিত-কোহলি-গিলরা।