বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: তিনি ছিলেন কলকাতার গোল মেশিন। একেবারে অল্প সময়ের মধ্যে কলকাতা লিগে ম্যাচ উইনার হয়ে উঠেছিলেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মোহামেডানে খেলা বঙ্গসন্তান (Bengali Footballer) সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলা বাহুল্য, 1981 সালে লাল হলুদের জার্সি গায়ে একেবারে 9 গোল করেছিলেন সোমনাথ বাবু।
বাংলার ফুটবল জগতে তাঁর পরিচিতি ছিল একেবারে টানটান। তবে কলকাতা ময়দানের 3 প্রধানের হয়ে খেলা এই বঙ্গ প্রতিভা আজ গৃহবন্দী। মূলত শারীরিক অসুস্থতার কারণে, ময়দানে ফেরা হয়নি তাঁর। খেলার জগত থেকে ছিটকে যাওয়ায় তাঁকেও মনে রাখেন প্রাক্তন দলের কেউই। আজ জানব কলকাতা ফুটবল লিগের একসময়ের গর্ব শ্যামনগরের সোমনাথ বাবুর অজানা কাহিনী।
1981-তেই রঙিন সময় কাটিয়েছিলেন সোমনাথ বাবু
জানা যায়, 1981 সালে কলকাতা লিগে গোছানো ফুটবল দিয়ে বহু ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের মন জয় করেছিলেন সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবার তাঁর গোলেই প্রতিবেশী মোহনবাগানকে গুঁড়িয়ে দার্জিলিং গোল্ড কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এছাড়াও IFA শিল্ড ফাইনালে বাগানের কাছে পিছিয়ে পড়া ইস্টবেঙ্গলকে দুরন্ত গোলে সমতায় ফিরিয়েছিলেন এই সোমনাথই।
জানিয়ে রাখি, এই আসরে যুগ্ম জয়ী হয়েছিল কলকাতা ময়দানের দুই প্রধান। পরবর্তীতে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে মহামেডানে যোগ দিয়েছিলেন সোমনাথ বাবু। কলকাতার এই ঐতিহ্যবাহী দলে বেশ কিছুটা সময় কাটানোর পর তিনি চলে যান মোহনবাগানে। সেখানেও চুটিয়ে ফুটবল খেলেছিলেন তিনি।
খেলার সুবাদেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় চাকরি
অনেকেই হয়তো জানেন না, শ্যামনগরের বঙ্গ প্রতিভা তথা ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো দলের এক সময়ের প্রধান ভরসা সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফিতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর এরপরই নাকি ফুটবল খেলার সুবাদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইডিয়ায় চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। তবে ফুটবলে একাধিক সাফল্য অর্জন করেও আজ তিনি শারীরিক অসুস্থতায় জর্জরিত। গৃহবন্দী হয়ে রয়েছেন বছরের পর বছর।
বাঙালি ফুটবলারের করুণ দশা
কলকাতা ময়দান প্রধানদের হয়ে একসময় মাঠের দাপিয়ে বেড়ানো সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন মোড় নেয় 2011 সালে। এবছর সেরিব্রাল অ্যাটাকে একেবারে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। অবশ হয়ে যায় শরীরের ডান পাশ। পরবর্তীতে ছেলে সৌরভের চেষ্টাতে ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে হাঁটাচলা শুরু করেন সোমনাথ। পরিবারের তৎপরতায় শরীর কিছুটা সুস্থ হলেও মনোবল একেবারে নেই। আর এরই মাঝে কেটে গিয়েছে প্রায় এক যুগ। ময়দান থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকায় সতীর্থরাও একেবারে ভুলে গিয়েছেন তাঁকে। মনে রাখেনি কলকাতা ময়দানও।
সোমনাথ বাবুর পরিবার সূত্রে খবর, একসময়ের পুরনো যোদ্ধা গৃহবন্দী হয়ে যাওয়ায় সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো ক্লাবের সাথে। এখন নাকি ময়দান প্রধানদের অনুষ্ঠানেও ডাক পান না তিনি। জানা গিয়েছে, বাবার অসুস্থতার কারণই ছেলে সৌরভকে ফিজিওথেরাপিস্টের পেশা বেছে নিতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে, শারীরিক দিক থেকে বেশ খানিকটা সুস্থ সোমনাথ বাবু। মাঝেমধ্যে পুরনো সতীর্থদের কথা যে মনে পড়ে না তেমনটা নয়, মনের গভীরে স্মৃতি চাগার দিয়ে উঠলে খোঁজ নেন পুরনো বন্ধুদের। তবে তাঁর খোঁজ নাকি কেউ নেয় না।
অবশ্যই পড়ুন: ঘর ভাঙছে মোহনবাগানের, দল ছাড়ছেন তারকা প্লেয়ার! বিকল্প কে?
উল্লেখ্য, শ্যামনগরের বাড়ি ছেড়ে বহু আগেই ব্যারাকপুরে চলে এসেছেন সোমনাথ বাবু। রয়্যাল পার্কের কাছে একটি অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় তলার বাসিন্দা তিনি। তবে ছেলে সৌরভ জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতাই বাবাকে একেবারে শেষ করে দিল! সোমনাথ বাবুর নাকি স্বপ্ন ছিল চাকরি থেকে অবসরের পর রয়্যাল পার্কে প্রাক্তন তারকা সুশীল সিনহার সঙ্গে ফুটবল কোচিং করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হল না এই বাঙালি ফুটবলারের।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |