বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: শনিবারের বহুপ্রতীক্ষিত হাই ভোল্টেজ ডার্বি ঝুঁকেছিল সবুজ মেরুনের দিকেই। দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায় ছিল উভয় পক্ষের ছেলেরাই। মাঠ দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থেকেও জালে বল জড়াতে পারেনি লাল হলুদ। ফলত দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জোরালো আঘাত হেনে শেষ পর্যন্ত 1-0 গোলে ডার্বি কাঁধে তোলে মোহনবাগান।
তবে এই ঘটনাই ম্যাচের প্রধান আকর্ষণ ছিল না। মোহনবাগানের জয়কে সামনে রেখে ম্যাচ চলাকালীন রেফারির একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তও ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC) পয়েন্ট তালিকায় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিশ্চিত হ্যান্ডবল এড়িয়ে গিয়েছিলেন রেফারি। যেই দৃশ্য ইতিমধ্যেই ঝড় তুলেছে সমাজ মাধ্যমে। রেফারির গাফিলতিকে সামনে রেখে তোপ দেগেছেন লাল হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোঁও।
হ্যান্ডবল মিস করায় রেফারিকে দুষলেন লাল হলুদ কোচ!
ডার্বি শেষে বাগানের কাছে পরাজিত হয়ে বুকের বাঁদিকে চিনচিনে ব্যথাটা যেন আরও জেঁকে বসেছিল। তবে সেই যন্ত্রণায় মলম না লাগিয়ে রেফারিকে কাঠগড়ায় তুললেন লাল হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মশালবাহিনীর স্প্যানিশ কোচ জানান, মোহনবাগানের হ্যান্ডবলটা সম্পূর্ণ স্পষ্ট ছিল। কিন্তু সেই দৃশ্য রেফারির চোখ এড়িয়ে যায়। এই ঘটনা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
রেফারির গাফিলতিকে সামনে এনেই অস্কার বলেন, ইস্টবেঙ্গল যেভাবে খেলছে, তা নিয়ে আমি সত্যিই খুব গর্বিত। তবে ম্যাচের ফলাফল নিয়ে এখন সত্যিই হতাশ। এক হয়, আমরা লাল কার্ড দেখার পর 10 জন খেলছি। অথবা ন্যায্য পেনাল্টি থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এই ঘটনা সত্যিই কাম্য নয়।
ঠিক কী ঘটেছিল?
ডার্বির প্রথমার্ধের সঙ্গে তখন অতিরিক্ত 2 মিনিট যুক্ত হয়েছে। এই সময়ে একটি নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হয় লাল হলুদ। ঘটনাটির সূত্রপাত, পিভি বিষ্ণু বল পায়ে পেনাল্টি বক্সে প্রবেশ করার পরই। গোলের উদ্দেশ্যে জোরালো শট এনেছিলেন বিষ্ণু, তবে বল গিয়ে লাগে বাগানের অপুইয়ার হাতে। যা একেবারে স্পষ্ট ছিল। তবে এই দৃশ্য রেফারির নজর এড়িয়ে যাওয়ায় তিনি নীরব দর্শকের ভূমিকা ছিলেন। আর এই ঘটনাই হতাশা বাড়িয়েছে লাল হলুদ ব্রিগেডের।
শৌভিক চক্রবর্তীকে লাল কার্ড দেখান রেফারি
অপুইয়ার নিশ্চিত হ্যান্ডবল মিস করার পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার শৌভিক চক্রবর্তীকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছাড়া করেন রেফারি। বিপদের সূচনা হয়েছিল শনিবারের খেলা 39 মিনিটে গড়াতেই শৌভিককে প্রথম হলুদ কার্ড দেখানোর পর। নেপথ্যে সেই আপুইয়া। বাগান তারকাকে ফাউল করার জন্য চক্রবর্তীকে প্রথম হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। আর এরপরই নিশ্চিত হয়ে যায় গতকালের ডার্বিতে শৌভিকের ভবিষ্যৎ।
এই ঘটনার পর খেলা যখন 64 মিনিটে ঠিক তখনই ফের শৌভিককে হলুদ কার্ড দেখান ইস্টবেঙ্গলের খলনায়ক রেফারি। এবার কারণটা ছিল লিস্টন। মূলত লিস্টনকে আটকাতে গিয়েছিলেন চক্রবর্তী, তবে তাঁকে টাচ করেননি তিনি। কিন্তু বাগান প্লেয়ারকে বাধা দেওয়ার কারণে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখতে হয় শৌভিককে। ফুটবলের নিয়ম অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পরিণত হয় লাল রঙে। কাজেই দুর্ভাগ্যের জালে পা দিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় চক্রবর্তীকে। আর এই সিদ্ধান্তেরই ঘোর বিরোধিতা করেছেন লাল হলুদ কোচ অস্কার।
রেফারির লাল কার্ডে আপত্তি রয়েছে ব্রুজোঁর!
শনিবারের ডার্বিতে ম্যাচ রেফারির প্রতিটি সিদ্ধান্ত লাল হলুদের বুকে জোরালো তীর নিক্ষেপ করেছে। শৌভিককে পরপর দু’বার হলুদ কার্ড এবং নিশ্চিত হ্যান্ডবলের পরও পেনাল্টি সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা মশাল বাহিনীতে ক্রোধের আগুন জুগিয়েছে। প্রাপ্য পেনাল্টি নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি শৌভিকের লাল কার্ড নিয়েও রেফারিকে কাঠগোড়ায় তুলেছেন অস্কার। লাল হলুদ কোচ বলেন, ম্যাচের প্রথম থেকেই ডিফেন্ডারদের মারাত্মক ভুলের কারণে গোল হজম করতে হয়েছে। তারপর রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত। শৌভিকের প্রথম হলুদ কার্ড নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু দ্বিতীয় হলুদ কার্ডটি মোটেই হলুদ কার্ডের যোগ্য নয়। একমাত্র রেফারির ভুলের কারণেই ভাল পারফরমেন্স সত্ত্বেও ভুগতে হচ্ছে দলকে।