বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: আশঙ্কাটা ছিল প্রথম থেকেই। ভিন রাজ্যের ছেলেদের হারিয়ে 3 পয়েন্ট ঘরে তোলাটাও ছিল যথেষ্ট কঠিন কাজ। কেননা, শত্রু শিবিরে আক্রমণ শানিয়ে জয় ছিনিয়ে নিতে না পারলে সুপার সিক্স অধরা থেকে যেত ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC)। সোমবারের ম্যাচ সেই বিপদেই মদদ জুগিয়েছে। গতকালের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে ধাক্কা দিয়ে মাঠের বাইরে সরিয়েছে মুম্বইয়ের ছেলেরা। যার জেরে সুপার সিক্সে ওঠার পথও কার্যত বন্ধ হওয়ার জোগাড়। তবে পরিসংখ্যান বলছে ক্ষীণ হলেও এখনও আশার আলো জ্বলছে মশাল ব্রিগেডে।
প্রথমার্ধেই বড় ধাক্কা খায় ইস্টবেঙ্গল
কলকাতায় ঘরের মাঠে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয়ের আশায় বুক বেঁধেছিল লাল হলুদের ছেলেরা। তবে প্রতিপক্ষ যে আটঘাট বেঁধে নেমেছে তা আগেভাগেই বুঝে গিয়েছিল অস্কারের দল। তাই শুরুর দিকে সুযোগ তৈরি করতে পারেনি লাল হলুদ বাহিনী। ম্যাচের শুরুতেই ব্রুজোনের ছেলেদের ছন্নছাড়া মনোভাব দেখে বোঝাই যাচ্ছিল ম্যাচের ভবিষ্যৎ। প্রথমার্ধ কিছুটা গড়াতেই ইস্টবেঙ্গলের চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে মুম্বই। আক্রমণ প্রতি আক্রমণের মধ্যে দিয়ে খেলা যখন 39 মিনিটে পা রেখেছে ঠিক সেই মোক্ষম সময়ে ইস্টবেঙ্গলকে ন্যাকানি চোবানি খাইয়ে জালে বল জড়ান লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে।
মুম্বইয়ের প্রথম সাফল্যটা এসেছিল ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজের পা ঘুরে। ব্রেন্ডনের গোছানো পাসে বলকে গন্তব্য দেখান ছাংতে। গোল পেয়ে যায় লাল হলুদের শত্রু শিবির। মুম্বইয়ের প্রথম বলে যখন কার্যত নীরবতা পালন করছে সল্টলেক স্টেডিয়াম। সেই অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত কাটিয়ে ফের 4 মিনিটের মধ্যে আবারও গোল করে বসে মুম্বই সিটি এফসি। এবারের গোলটা এসেছিল কারেলিসের পায়ে। খেলা যখন 43 মিনিটে দৌড়াচ্ছে ঠিক তখনই সুযোগ তৈরি করে কারেলিসের উদ্দেশ্যে বল থ্র করেন ভ্যান নিয়েফ। আর সেই সুযোগে বাঁ পায়ে জোরালো শট নেন কারেলিস। প্রথমে সাফল্য না এলেও গিলের বাঁচানো বল ফিরতি পথ দেখলে তাকে শট করে জালে ঢোকান কারেলিস। 2-0 গোলে এগিয়ে যায় মুম্বই।
দ্বিতীয়ার্ধেও লজ্জা ঢাকতে পারেনি লাল হলুদ
প্রথম 45 মিনিটে মুম্বইয়ের কাছে গোলের মালা পরে দ্বিতীয়ার্ধে কামব্যাক করতে চেয়েছিল ব্রুজোঁর দল। বাকি অংশের খেলা শুরু হতেই সেই পথ ধরে অনেকটাই হেঁটে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। লজ্জা ঢাকতে শত্রু পক্ষকে একপ্রকার চেপে ধরেছিল বেঙ্গলের ছেলেরা। তবে সাফল্য আসে 66 মিনিটের মাথায়। যদিও সেটা ছিল সাহিল পানওয়ারের আত্মঘাতী গোল। মুম্বইয়ের 1 গোল হজম করে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে লাল হলুদ বাহিনী। যুবভারতীর ময়দানে তখন চলছে জোর টক্কর।
আক্রমণ প্রতি আক্রমণের মধ্যে দিয়ে খেলা গড়িয়েছিল 80 মিনিটে। তখনও পরাজয় যন্ত্রনা এড়াতে গোলের সুযোগ খুঁজছিল ইস্টবেঙ্গল। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে, বড় শটের চেষ্টা করেছিল লাল হলুদের ছেলেরা। আর এই ঘটনার 3 মিনিটের মধ্যেই গোল হজম করে ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচ তখন 83 মিনিট ছুঁইছুঁই এমন সময়ে শত্রু শিবিরে জোরালো আক্রমণ শানিয়ে গোল করে বসেন ইস্টবেঙ্গলের লালচুংনুঙ্গা। তাঁর গোলেই প্রথমার্ধের লজ্জা কাটায় মশাল বাহিনী।
তবে সেই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ম্যাচ সমতায় সংখ্যা বাড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুম্বই। বল ওঠে সেই কারেলিসের পায়ে। আর তাতেই মেলে সাফল্য। 87 মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে নাথান রডরিগসের উড়ন্ত থ্র-কে গন্তব্য দেখিয়ে বাঁকানো শটে গোল আনেন মুম্বই সিটি এফসি তারকা। 3-2 ব্যবধানে এগিয়ে যায় তাঁর দল। তবে এরপর আর বিপদ বাড়েনি। চওড়া হাসি নিয়েই ম্যাচ শেষ করে ভিন রাজ্যের ছেলেরা। অন্যদিকে হারের যন্ত্রণা বুকে বেঁধে মাঠ ছাড়তে হয় পয়েন্ট টেবিলে অপরিবর্তিত ইস্টবেঙ্গলকে।
ইস্টবেঙ্গলের ধমকেই হল কাজ? অবশেষে ডার্বি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল মোহনবাগান