বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা ও অপারেশন সিঁদুরের পর প্রথমবারের মতো একই মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। যদিও এশিয়া কাপে দুই চির প্রতিদ্বন্ধীর ম্যাচের পক্ষে ছিলেন না ক্রিকেটপ্রেমীদের একটা বড় অংশ। ম্যাচ হলে জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিবারের কাছে খারাপ বার্তা যাবে, এমন দাবি জানিয়েই প্রকাশ্যে বারবার ভারত-পাক ম্যাচের বিরোধিতা করেছিলেন দেশবাসী। খেলা আটকাতে জল গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এছাড়া সমাজ মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সমালোচনা তো রয়েছেই। আর সেই সব ঘটনাকে সাক্ষী রেখেই রবির রাতে 22 গজের চেনা শত্রু পাকিস্তানকে বধ করল ভারত (India Beats Pakistan)।
পাক দলের বিরুদ্ধে সহজ জয় সূর্যদের
রবিবারের রাতে শেষ হাসিটা যে ভারতই হাসবে, তা বোঝা গিয়েছিল ম্যাচের শুরুতেই। এদিন ভারতের বিরুদ্ধে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাক অধিনায়ক সলমান আলি আঘা। সেই মতোই, নিজেদের কবজির জাদু দেখানোর সুযোগ পেয়ে যায় টিম ইন্ডিয়ার ছেলেরা। ম্যাচের প্রথম বল ওয়াইড করলেও দ্বিতীয় বলেই পাক ওপেনার স্যাম আয়ুবকে মাঠ ছাড়া করেন হার্দিক পান্ডিয়া। হার্দিকের প্রথম উইকেটেই শক্তিপায় গোটা ভারত। এরপর পান্ডিয়ার পথে হেঁটেই ভারতের ঝুলিতে দ্বিতীয় উইকেট পুরে দেন টিম ইন্ডিয়ার পেস বিভাগের স্তম্ভ জসপ্রীত বুমরাহ। তাঁর বলে শট খেলতে গিয়ে আউট হন মহম্মদ হ্যারিস। পাকিস্তানের ইনিংস তখন 6 রানে গড়িয়েছে।
ভারতের কাছে প্রথম দুই উইকেট খুইয়ে কার্যত নাজেহাল হয়ে পড়ে পাকবাহিনী। এরপর টিম ইন্ডিয়ার বোলারদের বিরুদ্ধে একেবারে নিঃশ্বাস চেপে লড়ার চেষ্টা করছিলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। এই সময়ে পাক দলের ম্যাচ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না যে তারা রবিবারের ম্যাচে পুরো 20 ওভার কাটাতে পারবেন। যদিও সেটা হয়েছে। তবে ভারতের বিরুদ্ধে 20 ওভার খেললেও পাক দলের কোমর ভেঙে গিয়েছিল পাওয়ার প্লে-তেই। এদিন শুরুর ওভার গুলিতে পেস বিভাগের উপর ভরসা করলেও পরবর্তীতে স্পিন বিভাগের দিকে ঝুঁকে যায় টিম ইন্ডিয়া। আর তাতেই আসে সাফল্য। ভারতের স্পিন আক্রমণ শুরু হতেই অসহায় হয়ে পড়ে প্রতিপক্ষ। ফলস্বরূপ 49 রানে 4 উইকেট হারায় পাকিস্তান। সেই দাপটের পর পাক দলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কুলদীপও। সেই আঘাত অবশ্য সামলাতে পারেনি পাকিস্তান।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে 4 উইকেট নিলেও রবিবার পাকিস্তানের 3 উইকেট ভেঙেছিলেন কুলদীপ। শেষ পর্যন্ত মান বাঁচাতে শাহীন আফ্রিদি চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই, যদিও তাতে কাজের কাজ হয়নি। নির্ধারিত ওভার শেষে 127 রানে 9 উইকেট হারিয়ে ইনিংসে ইতি টানে পাক দল। আর এরপরই শুরু হয় টিম ইন্ডিয়ার দাপট। পাকিস্তানের 128 রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিলেন অভিষেক শর্মা। তবে 31 রানের পর আয়ুবের বলে চালিয়ে খেলতে গিয়ে ফাহিম আশরাফের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। যার জেরে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাঁকে।
অবশ্যই পড়ুন: মাধ্যমিক পাস করলেই ৫০০০ টাকা, সঙ্গে শেখানো হবে হাতের কাজ! সেরা স্কিম কেন্দ্রের
বলা বাহুল্য, শর্মার আগেই 10 রান করে সাজঘরে ফিরেছিলেন শুভমন। যদিও তাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি ভারতের। পাক দলের বিরুদ্ধে দাপট ধরে রেখেই ভারতের জয়রথ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব এবং তিলক বর্মা। তবে টিম ইন্ডিয়াকে একপ্রকার জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে যেতেই হঠাৎ উইকেট ভাঙে তিলকের। ততক্ষণে ক্রিজে টিকে গিয়েছেন সূর্য। তাই ভারতকে আলোর দিশাটা দেখালেন তিনিই।
রবিবার, পাকিস্তানকে নাকানি চোবানি খাইয়ে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করেন টিম ইন্ডিয়ার সেনাপতি সূর্যকুমার যাদব। তবে দুঃখের বিষয়, এদিন অর্ধশত রানের খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। কারণ, সূর্যর হাফ সেঞ্চুরি পূরণের আগেই পূরণ হয়ে গিয়েছিল পাক দলের ছুঁড়ে দেওয়া লক্ষ্য। বলা বাহুল্য, এদিন একেবারে শেষ লগ্ন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়ে 37 বলে 47 রান করেছিলেন সূর্য। অন্যদিকে দুবের ব্যাট থেকে এসেছিল গুরুত্বপূর্ণ 10 রান। আর তাতেই 7 উইকেট হাতে রেখে এশিয়া কাপের প্রথম দর্শনেই পাকিস্তানকে বিদায় বললো ভারত। ঘুঁচল পাক অধিনায়কের মাত্রাতিরুক্ত আস্ফালনও।