বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি। জাতীয় দলের একসময়ের দাপুটে ফুটবলার তপনের (Ex Footballer Tapan Ghosh) ক্ষেত্রেও লেখকের সেই লাইন ধার করতে হচ্ছে।
কারণ একটাই, ভারতীয় দলের একসময়ের উজ্জ্বল মুখ, মোহনবাগানের হয়ে রক্ষণের দায়িত্বে থাকা ধুরন্ধর ফুটবলার তপন ঘোষ আজ 8 ঘন্টার কর্মী।
হ্যাঁ, বসিরহাট পুরসভার এক গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার তিনি। ফুটবল থেকে পা সরিয়ে নিয়েছেন বহুদিন। তারপর আর কেউ খোঁজটুকুও নেয়নি। সেই আবেগ ধরে রেখেই তপন বললেন, কেউ মনে রাখে না। দেশের হয়ে খেলেছি, এটা বলতেও এখন লজ্জা করে।
জাতীয় দলের উজ্জ্বল নক্ষত্র হতে পারতেন তপন ঘোষ
ভারতীয় ফুটবল কাউকে রাজা বানিয়েছে, কাউকে আবার ফকির। সেই বাঁধাধরা ছকে নাম রয়েছে বুক চিতিয়ে এক সময়ে জাতীয় দলে খেলা বসিরহাটের তপনেরও। পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটলে জানা যাবে, ভারতীয় দলের রক্ষণভাগ একেবারে শক্ত হাতে আগলে রেখেছিলেন বাংলার ছেলে। চার বছর খেলেছেন মাহিন্দ্রা ইউনাইটেডের জার্সিতেও।
এখানেই শেষ নয়, আগলেছেন মোহনবাগানের ডিফেন্সও। বাঙালির আবেগের বড় ম্যাচে ব্রাজিলীয় ডু-র সাথে মোহনবাগান রক্ষণের সেনানী ছিলেন তপন। তবে রাস্তাটা বদলে গেল মহামেডান স্পোর্টিং ম্যাচের পর থেকেই। এই আসরে প্রতিপক্ষ ফুটবলারের সাথে বল কাড়াকাড়ির সংঘর্ষে জড়িয়ে চোট পেয়েছিলেন বাঙালি ফুটবলার। এরপর পায়ে অস্ত্রোপচার, দীর্ঘ বিশ্রাম পর্ব কাটিয়ে আর মাঠের চেনা পরিবেশে ফেরা হয়নি তপনের।
ফুটবল ছেড়েছেন আজ প্রায় দুই যুগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভারতীয় ফুটবল দলের একসময়ের দাপুটে ফুটবলার, মোহনবাগানের রক্ষণ বাঁচানো তপন এখন বসিরহাট পুরসভার অপরাজিতা গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার। সপ্তাহে অন্তত ছয় দিন 8 ঘন্টা করে ডিউটি তাঁর। ফুটবল নিয়ে যে সেই পুরনো আবেগটা নেই তেমনটা নয়।
ভারতীয় ফুটবল দলের DNA জানেন তপন। নিয়মিত জাতীয় দলের খোঁজও রাখেন তিনি। এই যে খালিদ জামিলের হাত ধরে দীর্ঘ 17 বছর পর তাজিকিস্তানকে হারালো ভারত, সে খবরও তাঁর জানতে বাকি নেই। তবে আফসোস, ভারতীয় ফুটবল দলের হয়ে বড় কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর, আজ পরিস্থিতির চাপে সেই সব জলাঞ্জলি দিতে হয়েছেন
অবশ্যই পড়ুন: বিহারে মহাগঠবন্ধন না বিজেপির সরকার? সমীক্ষায় উঠে এল চমকপ্রদ তথ্য
অভিমানী তপনের খোঁজ কে রাখে?
বসিরহাট পুরসভার অপরাজিতা গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার তপনের খোঁজ আজ কেও রাখে না। সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে সে কথা বলতে গিয়েই নিজের পুরনো দুঃখের ঝুলি খুলে ফেলেছিলেন দলছুট ফুটবলার। তপন বলেন, বসিরহাট পুরসভার চেয়ারম্যান, প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস এবং অলোক দাসের সহযোগিতায় গেস্ট হাউসের চাকরিটা পেয়েছিলাম।
সেটাই এখনও আমার পেট চালাচ্ছে। তপন বলেন, এই কাজের পাশাপাশি সোলাদানা ফুটবল ক্যাম্পে বাচ্চাদের কোচিং করাই। বসিরহাট হাই স্কুলের ফুটবল কোচ কিন্তু তপনই। এসব কথা বলতে বলতেই ভারতীয় দলের একসময়ের সৈনিক জানান, বন্ধু বলতে বাবা-মা। তারাই আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
প্রাক্তন সতীর্থরা খবর নেয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তপন জানিয়েছিলেন, সবাই নিজের নিজের মত ব্যস্ত। আগের মতো কারোর সাথেই যোগাযোগ নেই তার। তাঁরাও আমার খোঁজ রাখেনি। সব মিলিয়ে, ভারতীয় ফুটবল দল থেকে শুরু করে মোহনবাগান, মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো ফুটবলারের জীবন আজ আর পাঁচটা সাধারণ কর্মচারীর মতোই। এটাই কি তাহলে ভবিতব্য? উত্তর জানেন না তপন।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |