বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ভারতকে (Indian Football Team) আটকে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-21 দলের হয়ে খেলা হামজা চৌধুরী। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের গায়ে সবুজ জার্সি উঠতেই শুরু হয় বিস্তর চর্চা। প্রশ্ন ওঠে, হামজা যদি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার পাশাপাশি বাংলাদেশের সিনিয়র দলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন, তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন দলে খেলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা কেন দেশের হয়ে খেলতে পারবেন না?
এমন নয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলে বংশোদ্ভুত খেলোয়াড় হিসেবে হামজা একমাত্র উদাহরণ। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটে বিশ্বে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যাঁদের জন্ম এক দেশে এবং খেলেন অন্যদেশের হয়ে। আর এখানেই বিতর্কে জড়িয়েছে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। কার্যত কয়েক যুগ ধরে চলে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভুত ফুটবলারদের খেলানোর দাবিতে কেন এখনও সীলমোহর পড়ছে না তা নিয়ে যথেষ্ট সরগরম ভারতীয় ফুটবল দুনিয়া।
ভারতীয় আইন
ভারতীয় বংশোদ্ভুতরা জাতীয় দলে খেলতে পারেন না মূলত ভারতীয় আইনের মারপ্যাঁচের কারণে। ভারতীয় নিয়ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যার বাবা-মা অথবা পরিবারের কেউ ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন বা দীর্ঘদিন বসবাস করছেন কিংবা ভারতের কোনও স্থায়ী নাগরিককে বিয়ে করেছেন, এমন ক্ষেত্রে তিনি কখনই অন্য দেশের নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন না।
আর এই নিয়মের বেড়াজালে জড়িয়েই ভারতীয় বংশোদ্ভুতরা সুনীল ছেত্রীদের দলে খেলতে পারেন না। সূত্র বলছে, মায়ের দেশের হয়ে খেলতে হলে সবার আগে দ্বিতীয় দেশটির নাগরিকত্ব ছাড়তে হবে খেলোয়াড়দের। তবে তাতেও নাকি রয়েছে সমস্যা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অন্য দেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে ভারতের ওসিআই অর্থাৎ ওভারসিজ সিটিজেন্স অফ ইন্ডিয়া কার্ডের দৌলতে ভিসা থেকে শুরু করে ভারতীয় সুবিধা পেলেও জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারবেন না।
ফিফার নিয়মে কী রয়েছে?
বংশোদ্ভুত ফুটবলারদের ক্ষেত্রে ফিফা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, একজন ফুটবলার কোনও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন তখনই, যখন তাঁর কাছে সেই দেশের বৈধ পাসপোর্ট থাকবে। মূলত ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ নথি অর্থাৎ পাসপোর্ট কাছে থাকলেই সংশ্লিষ্ট দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন একজন ফুটবলার। তবে সেই পাসপোর্টে লাতিন হরফে ওই ফুটবলারের নাম, জন্ম সাল, জন্মস্থান ও নাগরিকত্বের উল্লেখ থাকা আবশ্যিক।
আশ্বাস দিয়েছিল ফেডারেশন
সম্প্রতি সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থা বা অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কল্যান চৌবে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় বংশোদ্ভুত ফুটবলাররা যাতে জাতীয় দলে খেলতে পারেন তার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করছে ফেডারেশন। এই ঘটনা বাস্তবায়িত হলে আদতে লাভ হবে ভারতীয় দলের। তবে তার আগে তাঁরা যাতে ভারতের হয়ে খেলতে পারেন সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে জাতীয় দলে তাঁদের গুরুত্ব বোঝাতে হবে।
অবশ্যই পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় থেকে ভূমিকম্প, হার মানবে সবই! আজই প্রথম উলম্ব-উত্তোলিত রেলসেতু পাচ্ছে ভারত
যদিও ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি সুব্রত দত্ত জানিয়েছিলেন এই কাজ একেবারেই সহজ হবে না। এক সাক্ষাৎকারে অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে প্রাক্তন সভাপতি বলেন, 2011 সালে আমরা মাইকেল চোপড়াকে দলে টানার চেষ্টা করেছিলাম। তবে সেবার ব্রিটেন সরকার তাঁর পাসপোর্ট দিতে অস্বীকৃত ছিল। কাজেই নতুন করে সেই অসাধ্য সাধন আদৌ সম্ভব হবে কিনা তার উত্তর দেবে সময়।