প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চলতি বছর দুর্গা পুজোয় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও, খুব একটা জ্বালাতন করেনি সেই দুর্যোগ। মোটামুটি শুকনো আবহাওয়াতেই পুজো কেটেছে সকলের। কিন্তু সেই প্রতিশোধ যে আবহাওয়া কালীপুজোর আগেই নেবে তা কে জানত। কারণ এবার শহরে আলোর উৎসবের আগেই রক্তচক্ষু নিয়ে হাজির হতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’। ইতিমধ্যেই ওড়িশা ও বাংলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে বইতে পারে এই ‘ডানা’। যার দরুন সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়বে। তাই মৎস্যজীবীদের এই কদিন সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’-র বর্তমান অবস্থা! Cyclone Dana Live Updates |
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে চলেছে পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণাবর্তটি। এবং আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে সেটি। জানা গিয়েছে ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর ভোরের মধ্যে পুরী ও সাগরদ্বীপের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নির্ধারণ করার জন্য একাধিক মডেল তৈরি করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও বিভিন্ন মডেল ঘুর্ণিঝড়ের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে নানা তথ্য সামনে উঠে এসেছে। ইসিএমডাব্লিউএফ মডেল অনুসারে এবং আইসিওএম মডেল অনুসারে এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে বাঁক নিতে পারে পশ্চিম দিকে। তারপর সেটি পৌঁছে যেতে পারে পুরীর উপকূলে। ২৫ অক্টোবর ভোররাত ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে চলতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া।
দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টির সতর্কতা
GFS মডেল অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগরে এসে বাঁক নিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ডানা। তারপর সেটি ক্রমে দক্ষিণবঙ্গের দিকে বেঁকে চলে আসতে পারে দীঘা ও মন্দারমণির মাঝামাঝি। এবং আগামী ২৪ অক্টোবর রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলে। তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার প্রতিঘণ্টায়। আর এই ‘ডানা’- র প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হবে। তবে সবচেয়ে বেশি সতর্কতা জারি করা হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, , ঝাড়গ্রাম সহ বেশ কিছু জেলায় অবিরাম বৃষ্টি হবে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে এক বা দুটি জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
প্রশাসনের সতর্কবার্তা
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা সরকার ডানা আসার আগেই প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। অনেক আগেই বিভিন্ন আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছিলেন যে এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওড়িশা উপকূল এবং পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাইতো প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও শুরু হয়েছে মাইকিং। এবং মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আগামী শুক্রবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পুরীতে না আসতে পর্যটকদের অনুরোধ করেছে ওড়িশা সরকার। পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে বাংলা ও ওড়িশার মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করল কেন্দ্র।