প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে এবং জীবনে বড় কিছু সাফল্য অর্জন করতে সকলেই জীবন যুদ্ধের প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়। আর সেই প্রতিযোগিতা কারোর কাছে কপাল জোরে লাকি হলেও অন্যের কাছে তা যেন মরণের লড়াই। কষ্ট যতই হোক না কেন কিন্তু চেষ্টা একদমই বিফলে যাবেনা। সম্প্রতি জীবন যুদ্ধের এই পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেছে দুই বঙ্গ তনয়। UPSC তে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।
জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার UPSC-র ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস অর্থাৎ ISS পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হয়েছে ৷ আর সেই ফল প্রকাশেই বাঙালির জয়জয়কার। প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বছর সাতাশের সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী, যিনি কিনা পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল নিবাসী। এবং অপরজন হলেন আউশগ্রামের বিল্টু মাজি। তবে দুজনের এই সাফল্য খুব সহজেই প্রাপ্তি লাভ হয়নি। কঠোর তপস্যা এবং মেধার বলে অবশেষে সাফল্যের পথ প্রসারিত হয়েছে। চলুন আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে তাঁদের সাফল্যের কাহিনী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
প্রথম স্থান সিঞ্চন অধিকারী
সিঞ্চন আসানসোলের ইসমাইল মাদার টেরেজা সরণির বাসিন্দা। তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তন ছাত্র। পরে কলকাতার আইএসআই থেকে স্ট্যাটিস্টিক্সে স্নাতকোত্তরের পড়া শেষ করেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। বাবা প্রদীপ অধিকারী হলেন মাইন্স বোর্ড অব হেলথের কর্মী। মা সুজাতাদেবী গৃহবধূ। তাঁর সাফল্যে খুশি পরিবার, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ ও সমগ্র আসানসোল শহর। তবে কঠিন অধ্যবসায়ের পর এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটাই সিঞ্চন দিতে চান তাঁর বাবা-মাকে। তবে বাবা প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, “UPSC তে পাশ করা ওঁর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু দেশের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করবে, তা ভাবিনি। খুব ভালো লাগছে। শুধু পরীক্ষায় প্রথম নয়, প্রশাসক হিসাবেও যেন এক নম্বর হয়, এটাই চাইব।”
দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে বিল্টু মাজি
অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা বিল্টুর লড়াইটা যেন আরও কঠিন। বাবা কৃষক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিস্টিক্সে স্নাতক পাশ করার পরই সংসারে অভাবের কারণে কাজ যোগ দেন। পোস্ট অফিসে চাকরি পান তিনি। কিন্তু ইচ্ছাকে কাজের ভিড়ে দমিয়ে দেননি। তাইতো কাজের পাশাপাশি সমবেগে চলতে থাকে পড়াশোনা। WBCS ও UPSC মিলিয়ে তিনবার অসফল হন। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। মনের মধ্যে সাফল্য অর্জনের জেদ চেপে “আমি নিয়মিত ভাগবত গীতার অধ্যায়গুলি শুনতাম। গীতার কর্মযোগ আমার সাহস জুগিয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন ‘লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত হাল ছেড়ো না।’ তাইতো সেই পথই অবলম্বন করলাম।”