শ্বেতা মিত্র, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ ‘১৫ দিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়ুন’, এহেন উচ্ছেদ নোটিশ পেয়ে মাথায় হাত পড়ল শতাধিক পরিবারের। কেউ হয়তো ভাবতেও পারেননি যে বছরের পর বছর ধরে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাস করার একদিন এরকম নোটিশও পেতে হবে সকলকে। আজ কথা হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের একটি পরিত্যক্ত জায়গা নিয়ে যেখানে এক সময়ে এয়ারপোর্ট ছিল। এটি ব্রিটিশ আমলে তৈরী হয়েছিল। তবে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর জায়গাটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এখন সেখানে সাধারণ মানুষ বাস করেন। সবই ঠিকঠাক চলছিল আচমকা সবার সবকিছু ঘেঁটে দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে পাঠানো একটা চিঠি। এই চিঠিতে ঘিরে রীতিমতো সকলে রাতে ঘুম হয়ে গিয়েছে।
৩০০ পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের প্রায় ৩০০ টি পরিবারকে আচমকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই চিঠিতে জানানো হয়েছে, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে সকলকে সেখান থেকে উঠে যেতে হবে। আসলে আজ যে জায়গা সম্পর্কে কথা হচ্ছে সেটির নাম হলো কমলা গ্রাম হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।
জানা গিয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি করে যাওয়া, এয়ারপোর্ট এখন সাধারণ মানুষের ব্যবহার করার জায়গা হয়েছে এই এয়ারপোর্টে বর্তমানে একটি টাকা ছাপানোর টাকশাল তৈরি করা হয়েছে। আর এই জায়গাতেই রয়েছেন বহু মানুষ। এখন সেখানেই বসবাসকারী ৩০০টি পরিবারকে জায়গা খালি করার নোটিশ পাঠিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তবে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ‘আপনারা সকলেই থাকুন, নিশ্চিন্তে ঘুমান, আমরা বুঝে নেব।’
‘কমলা’-র ইতিহাস
এই কমলা গ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে সকলকে ফিরে যেতে হবে ১৯৪০ সালে। এই শালবনী থানার অন্তর্গত কমলা জায়গায় ব্রিটিশের তরফে একটি এয়ারপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল আর এয়ারপোর্টের পাশের একটি অঞ্চলে মানুষের বসবাস করার জন্য বসতি অবধি তৈরি করা হয়েছিল। এখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কৃষিজিবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের মানুষ থাকেন। এদিকে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর এয়ারপোর্ট পরিত্যক্ত হয়ে যায় এখন এই পরিত্যক্ত জায়গাতেই টাকা ছাপানোর ট্যাকশাল তৈরি করা হয়েছে। এরপর ২০২২ সালে আচমকাই এ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে একটি চিঠি পাঠানো হয়। যে চিঠিতে উল্লেখ করা হয় ১৫ দিনের মধ্যে জায়গায় ছাড়তে হবে। এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা জেলা প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে কলকাতায় আসেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে দপ্তরে গিয়ে সকলের নিজেদের কাগজপত্র অবধি দেখান। মামলাটি হাইকোর্ট অবধিও গড়ায়। দায়ের করা হয় জনস্বার্থ মামলাও। স্থানীয় প্রশাসনের তরফের সাধারণ মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।