স্বাস্থ্যসাথীতে বিস্তর দুর্নীতির পর্দাফাঁস! পূর্ব মেদিনীপুরের ৯৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা

Published on:

swasthya sathi mamata

সাধারণ মানুষের কল্যাণের স্বার্থে বছরের পর বছর ধরে কিছু না কিছু করেই চলেছে সরকার। সে কেন্দ্রীয় সরকার হোক কিংবা বাংলার সরকার, সাধারণ মানুষের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা, প্রকল্প চালিয়ে আসছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কথা বললে, বিগত কয়েক বছরে এই সরকার নানা রকম প্রকল্প এনে মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করেছে। বিভিন্ন প্রকল্প যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, পথশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী ইত্যাদি। যদি স্বাস্থ্যসাথীর কথাই ধরা হয়, তাহলে এই প্রকল্পে সাধারণ মানুষকে সরকারের তরফে একটি কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ডের মাধ্যমে অনেক স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়। তবে এবার এই স্বাস্থ্যসাথী নিয়েই উঠল বেনিয়মের অভিযোগ। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।

স্বাস্থ্যসাথীতে বেনিয়মের অভিযোগ

WhatsApp Community Join Now

একদিকে যখন শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি থেকে শুরু করে মিড ডি মিল, রেশন দুর্নীতি নিয়ে সরগরম বাংলা তখন এবার এই স্বাস্থ্যসাথী নিয়েও উঠল দুর্নীতির অভিযোগ। আর এহেন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিব্র শোরগোল পড়ে গিয়েছে সর্বত্র। মূলত স্বাস্থ্যসাথী বিল খতিয়ে দেখতে গিয়ে একটি বড়সড় বেনিয়ম ধরা পড়েছে। একই ডাক্তার একই সময়ে দুই হাসপাতালে কীভাবে অপারেশন করলেন? এভাবেই স্বাস্থ্যসাথীর বিল খতিয়ে দেখতে গিয়ে অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।

একাধিক নার্সিংহোমকে নোটিশ

এই ঘটনায় এবার পূর্ব মেদিনীপুরের ৭০টি নার্সিং হোমকে নোটিশ পাঠানো হল। সেইসঙ্গে ৯৩ জন চিকিৎসককে শোকজ নোটিশ অবধি পাঠানো হয়েছে বলে খবর। স্বাস্থ্যসাথীর বিল অনুমোদন করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে পূর্ব মেদিনীপুরের CMOH-র। একদিকে যখন আরজি কর ইস্যুতে গোটা বাংলা তোলপাড়, জায়গায় জায়গায় জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে, সেখানে পূর্ব মেদিনীপুরের এহেন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শুধুমাত্র সদর শহর তমলুকেই মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন ৩ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৭৯ টি নার্সিংহোম। এছাড়াও জেলার পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, হলদিয়া, চণ্ডীপুর, কাঁথি ও এগরা-সহ বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে আরও বেশ কিছু নার্সিংহোম। আর এই নার্সিংহোমগুলি থেকে বহু ক্ষেত্রেই নিয়মিতভাবে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে। জানলে অবাক হবেন, ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কেউ ১৫ থেকে ২৯টি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে একাধিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। উঠেছে অপারেশন করার মতো অভিযোগও।

স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুটি নার্সিংহোমে একই দিনে একই সময়ে একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে অপারেশন করানোর অভিযোগ ঘিরে সরগরম জেলা। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো গর্জে উঠেছেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। এদিকে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতরও।

মহা ফাঁপরে নামী চিকিৎসকরা

বেনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মেদিনীপুর শহরের বহু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একাধিক নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে সকলকে ধরে ধরে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

১) ময়নার প্রাক্তন বিধায়ক তথা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সংগ্রাম দোলুই।

২) শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কবীর আলি খান।

৩) চিকিৎসক বিক্রমাদিত্য খাঁড়া, তাঁর বিরুদ্ধে ২৯টি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ।

৪) চিকিৎসক অর্ধেন্দুবিকাশ দাস ১৬টি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ।

৫)পুষ্পিতা দে, শুকদেব বর্মণ, নন্দিতা দাস ১৫টি করে নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ।

৬) গোপীনাথ মাজির বিরুদ্ধে ১৪টির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ।

৭) জয়দেব বর্মণের বিরুদ্ধে ১২টি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ।

এদিকে বড় মন্তব্য করেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায়। তিনি বলেন, “আর জি করের ঘটনার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। স্বাস্থ্যসাথীর বিল থেকেই এই অনিয়মের বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই শোকজ হয়েছে।”

সঙ্গে থাকুন ➥