প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ফের সরকারি হাসপাতালে উঠছে চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন! অভিযোগের তীর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের (North Bengal Medical College Hospital) দিকে। রোগীকে সরকারি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যাওয়ার আগেই কার্যত বিনা চিকিৎসায় হাসপাতাল চত্বরে মারা গেলেন ৩৫ বছরের ওই যুবক।। দায়ী করা হল হাসপাতালে রোগীর ট্রলি ব্যবস্থা নিয়ে। উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যে হাসপাতাল চত্বরে।
মেডিসিন ওয়ার্ডে ট্রান্সফার বিশ্বজিৎকে!
রিপোর্ট অনুযায়ী পরিবার তরফে জানানো হয়েছে, গত বুধবার বিকেল থেকে লাগাতার বমি হচ্ছিল বাগডোগরা সমরনগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ চন্দের। শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না আসায় গত বৃহস্পতিবার পরিজনেরা তাঁকে বাগডোগরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখান থেকে গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। অ্যাম্বুল্যান্সে বিশ্বজিৎকে মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসেন তাঁর বাবা ও পিসি। এরপর ইমার্জেন্সি থেকে বলা হয়, বিশ্বজিৎকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু রোগী চলার মতো অবস্থায় না থাকায় পরিজনেরা ট্রলি আনতে যান। তাতেই সময় লেগে যায় তিন ঘণ্টা।
হাসপাতালের গাফিলতিতেই রোগীর মৃত্যু!
বিশ্বজিৎ দাসের পিসি নূপুর পাল বলেন, ‘প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রলির জন্য আমাদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কাউন্টারে বসে থাকা কর্মীদের কাছে আমরা হাতে-পায়ে ধরে ট্রলি চাই। কিন্তু, ট্রলি দেওয়া হয়নি। সেখানকার এক কর্মী ঘরের বাইরে এলে তিনি ট্রলির জন্য ২০০ টাকা চান।’ এরপর সেই ২০০ টাকার বিনিময়ে ট্রলি বা স্ট্রেচারের জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু ওই ট্রলিতে তুলে রোগীকে মেডিসিন ওয়ার্ড অবধি নিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনেই বিশ্বজিৎ এর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের তরফে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতাল চত্বরে। গাফিলতীর অভিযোগ তোলা হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, কে এই জাস্টিস সুজয় পাল?
রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চরম পরিস্থিতি তৈরি হলে হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা: সুদীপ্ত মণ্ডল জানিয়েছেন, “ট্রলি না পেয়ে মৃত্যুর কথা শোনা গিয়েছে। এমার্জেন্সি বিভাগের কাছে ট্রলিরুম আছে। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীও থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে কেন রোগীর পরিবার ট্রলি পেল না, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে।” অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পরিষেবা নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কেন সিরিয়াস একজন রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়নি? শুধু তাই নয় কেন ইমার্জেন্সি থেকে ট্রলি বা স্ট্রেচারের ব্যবস্থা না করে রোগীকে ভর্তির জন্য ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হলো? এখনও এই ব্যাপারে নিশ্চুপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।