শ্বেতা মিত্র, মুর্শিদাবাদঃ সম্প্রতি খবর মিলেছিল যে এক মহিলার কান কামড়ে দিয়েছিল একটি বিষাক্ত সাপ। এদিকে সাপের কামড়ে শেষমেষ প্রাণটা খোয়াতে হয়েছে মহিলাকে। তবে মুর্শিদাবাদ থেকে এবার এমন একটি খবর প্রকাশ্যে উঠে এসেছে যা শুনে চমকে গিয়েছেন সকলে। দীর্ঘ ২২৮ বছর পর দেখা মিলল বিরল একটি সাপের। শুনে চমকে গেলেন তো? কিন্তু এটাই দিনের আলোর মতো সত্যি। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন যে পলাশীর যুদ্ধের সময় এই ধরনের সাপ দেখা যেত। তবে এখন ২০২৪ সালে এই সাপ কিভাবে এল তা নিয়ে রীতিমতো ধন্ধে পড়ে গিয়েছেন সকলে।
মুর্শিদাবাদে উদ্ধার বিরল সাপ
এমনিতে একাধিক রিপোর্টে উঠে এসেছে যে চলতি বছরে সাপের কামড়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে কিংবা একাধিক জায়গা থেকে থেকে উদ্ধার হয়েছে। তবে ২২৮ বছর পর এক বিরল সাপের দেখা মেলা কিন্তু মুখের কথা নয়। জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদে ফারাক্কা থেকে উদ্ধার হয়েছে বিরলতম সাপটি। এদিকে এত বছর পর এহেন সাপ উদ্ধারের ঘটনায় কার যোগ হয়ে গিয়েছেন সকলে। সেই সঙ্গে সকলের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশনও সৃষ্টি হয়েছে আরও কোথাও এরকম ধরনের বিরলতম সাপ লুকিয়ে রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকেই।
সাপটির নাম কী?
বুধবার দুপুরে ফরাক্কার ২ নম্বর নিশিন্দা কলোনিতে সাপটিকে প্রথম দেখা যায়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বাড়ির উঠোনে মাটির গর্তে সাপটি লুকিয়ে ছিল। গ্রামের সকলেই অচেনা সাপটিকে দেখে অবাক হয়ে যান। এরপরেই তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় সর্পবিশারদ প্রলয় চট্টোপাধ্যায়কে। এসিকে তিনি খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে উদ্ধার করেন সেটিকে। তাঁরাও বুঝতে পারেন না যে সাপটির নাম কী। ১৭৯৬ সালের পর ২০২৪ সালে এই সাপটির দেখা মিলেছে। যাইহোক, সাপটির নাম জানার জন্য ‘স্কেল কাউন্ট’ করে প্রকৃত পরিচয় জানা যায়। এখন আপনিও নিশ্চয়ই ভাবছেন যে এই সাপটির নাম কী? এই সাপটির ইংরেজি নাম, ইন্ডিয়ান স্যান্ড স্নেক। আবার ল্যাটিন ভাষায় এর নাম স্যামোফিস কন্ডেনারুস।
কী বলছেন সর্প বিশারদ?
সাপটি প্রসঙ্গে প্রলয়বাবু জানান, ‘সাপটির পেটের তলার হলুদ-সাদা ও গায়ের উপরে বাদামি রঙের দাগ রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সেটিকে নির্বিষ ‘বেত আছড়া’ সাপ বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখতেই ফারাক চোখে পড়ে। সাপটি মৃদু বিষধর। তবে মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। প্রধানত গিরগিটি, টিকটিকি, ছোট ব্যাঙ খেয়ে বেঁচে থাকে। এটি অবিভক্ত বাংলায় এর আগে ১৭৯৬ সালে পাওয়া গিয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র সংক্রান্ত একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।’
অন্য আরেক সর্পবিশারদ অনির্বাণ চৌধুরী জানান, ব্রিটিশ সর্প বিশারদ রাসেল ১৭৯৬ সালে অবিভক্ত বাংলা থেকে পাওয়া এই প্রজাতির সাপের একটি নমুনা থেকে ইন্ডিয়ান স্যান্ড স্নেকের ছবি এঁকেছিলেন। এর পর ১৮২০ সালে মেরেম বৈজ্ঞানিক বর্ণনা দেন সাপটির। এক ব্রিটিশ সর্প বিশারদ উনবিংশ শতকে ওড়িশার গঞ্জামে এই প্রজাতির সাপের সন্ধান পেয়েছিলেন। ১৯৮৩-তে সর্পবিদ জেসি ড্যানিয়েল এবং ১৯৮৬-তে টিএসএন মূর্তি তাঁদের বইয়ে স্যান্ড স্নেকের সম্ভাব্য প্রাপ্তিস্থান হিসাবে দাক্ষিণাত্য, ওড়িশার পাশাপাশি বাংলার নামও উল্লেখ করেন। প্রলয়ের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে এর আগে এই প্রজাতির সাপ কখনও উদ্ধার হয়নি।