প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাতারাতি চিড়িয়াখানা থেকে গায়েব হচ্ছে অসংখ্য প্রাণী! কলকাতার ঐতিহাসিক আলিপুর চিড়িয়াখানায় ফের প্রাণী নিখোঁজের অভিযোগ উঠল। জানা গিয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের শেষে চিড়িয়াখানার প্রাণীসংখ্যা যেখানে ছিল ৬৭২টি। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যা নেমে আসে ৩৫১-এ। উধাও প্রায় ৩২১টি প্রাণী। তাই এবার চিড়িয়াখানার প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেছে Swazon নামের একটি শহরভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
হিসাবে বিরাট গরমিল
দেশের কোন পশুশালায় কোন কোন প্রজাতির পশু কতগুলো করে রয়েছে সেই বিষয়ে প্রতি বছরই সেন্ট্রাল জ়ু অথরিটি একটি তালিকা প্রকাশ করে। সর্বশেষ যে তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটি ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষের। অর্থাৎ এই তালিকায় ২০২৪–এর ১ এপ্রিল থেকে ২০২৫–এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমায় দেশের সব চিড়িয়াখানার পশুপাখির হিসেব পাওয়ার কথা।
২০২৫ সালের ৩১ মার্চ প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১,১৮৪টি প্রাণী রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ২০২৪ সালের তালিকায় যেসব বেঙ্গল টাইগার, এশিয়াটিক লায়ন, গন্ডার, হাতি, চিতা, শিয়াল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেগুলোর কোনও উল্লেখ ২০২৫ সালের তালিকায় নেই।
প্রশাসনিক গাফিলতি নিয়ে মামলা
তালিকায় নাম নেই হিমালয়ান ব্ল্যাক বেয়ার, ইন্ডিয়ান ওয়াইল্ড ডগ বা ঢোল এবং বিপন্ন প্রজাতির তকমা পাওয়া লম্বা মুখের কুমির ঘড়িয়ালেরও। আর এই তালিকা হাতে পাওয়ার পরই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে কর্মরত বেশ কয়েকটি সংগঠনের মিলিত মঞ্চ ‘সেভ ওয়াইল্ড অ্যানিম্যালস অফ আওয়ার জ়ু অ্যান্ড আওয়ার নেচার’ বা Swazon এর সদস্যরা।
জানা গিয়েছে, প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো এই চিড়িয়াখানার প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় সংস্থার দাবি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে চিড়িয়াখানায় ৬৭২টি প্রাণী ছিল, কিন্তু ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে এই সংখ্যা নেমে আসে ৩৫১-এ। মাত্র একরাতেই গায়েব ৩২১টি প্রাণী!
একাধিক অভিযোগ সংস্থার!
এছাড়াও পিটিশনে তাঁদের আরও দাবি যে, চিড়িয়াখানায় প্রাণীগুলোর সংখ্যা কৃত্রিমভাবে কমিয়ে ফেলার পিছনে রয়েছে রাজ্য সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র। রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আলিপুর চিড়িয়াখানার ৩৪এ, বেলভেডিয়ার রোডের ৩ একরের একটি গুরুত্বপূর্ণ জমি নাকি কমার্শিয়াল ব্যবহারের জন্য বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণে চিড়িয়াখানার প্রাণী কমানো হচ্ছে। এভাবে ধাপে ধাপে চিড়িয়াখানার অস্তিত্ব ধ্বংস করে জায়গাটি বেসরকারি রিয়েল এস্টেটের হাতে তুলে দেওয়ার ছক চলছে।
এর আগে উঠেছে অজস্র অভিযোগ
যদিও এই ঘটনা প্রথম নয়, এর আগেও ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর থেকে প্রায় প্রতি বছরই চিড়িয়াখানার প্রাণীসংখ্যার বার্ষিক রিপোর্টে গরমিল দেখা গেছে। কখনও ৫টা, কখনও ১০টা, আবার কখনও ২০০-৩০০টি প্রাণী কমে বা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা গিয়েছে। এদিকে সংগঠনের প্রশ্ন, “যদি ৩১ মার্চ ২০২৫–এ আলিপুর চিড়িয়াখানায় কোনও হিমালয়ান ব্ল্যাক বেয়ার, ইন্ডিয়ান ওয়াইল্ড ডগ এবং ঘড়িয়াল না থাকে তাহলে তাদের সেখান থেকে বেঙ্গল সাফারিতে নিয়ে যাওয়া হলো কীভাবে?” তবে কি আলিপুর চিড়িয়াখানার তরফে সেন্ট্রাল জ়ু অথরিটির কাছে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল, সেখানে ডেটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে কোথাও ভুল হয়েছিল?
আরও পড়ুন: স্বমহিমায় দিলীপ ঘোষ! দেবকে রিজাইন করার চ্যালেঞ্জ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির
কবে হবে শুনানি?
কিন্তু ২০২৩–২৪ এবং ২০২৪–২৫ অর্থাৎ পর পর দু’বছরের অ্যানুয়াল ইনভেন্টরি–র তথ্যে এত বেশি ফারাক রয়েছে যে তা ভুল হিসেবে মেনে নেওয়া বেশ অস্বস্তির। এদিকে CZA-র গাইডলাইন অনুযায়ী, কোন চিড়িয়াখানায় ৭০০টির বেশি প্রাণী ও দেশি-বিদেশি প্রজাতির বৈচিত্র্য থাকলে তাকে ‘লার্জ জু’ হিসেবে ধরা হয়।
আগে আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রাণীসংখ্যা এই মানদণ্ডে পড়লেও এখন তা কমে যাওয়ায় এটি ‘মিডিয়াম সাইজ জু’ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। জানা গিয়েছে আগামী ২৪ জুলাই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা কলকাতা হাইকোর্টে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |