বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: জন্ম থেকেই সবকিছু অন্ধকার। আসলে দৃষ্টিহীন মানুষের জীবন যা হয় আর কি। তার মধ্যেও নিজের স্বপ্নের পেছন হত্যে দিয়ে পড়েছিলেন পাড়া-প্রতিবেশীর নয়নের মণি বাবলু হালদার। ছেলেবেলায় দৃষ্টিশক্তি না থাকার কারণে অনেকের কাছেই ঠাট্টার পাত্র হয়েছিলেন তিনি। এবার সেই বাবলুকেই নিজের হাতে শংসাপত্র দিয়ে সম্মানিত করলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কারণ, সর্বভারতীয় আইটি ট্রেড পরীক্ষায় প্রতিবন্ধীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার (Bablu Halder First In ITI Trade Exam) করেছেন মুর্শিদাবাদের কান্দির বাবলু হালদার।
দিনমজুরের ছেলের গল্প শুনছে আজ গোট দেশ
মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার উগ্রাভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবলু হালদার। ছেলেবেলা থেকেই আর্থিক অনটনের সাথে লড়াই করতে হয়েছে বাবা-মাকে। তাই তাঁর সাথে দারিদ্রতার পরিচয়টা অনেক আগে থেকেই। বাবলুর বাবা পেশায় দিনমজুর। মা গৃহবধূ। বাবলু যে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তেমনটা কিন্তু একেবারেই নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাংলার কৃতি ছাত্রের তিন দিদিও রয়েছে। যদিও তাঁরা প্রত্যেকেই বিবাহের পর শশুর বাড়িতে থাকেন। না বললেই নয়, বাবলু যখন প্রথমবারের মতো পৃথিবীর আলো দেখে, ডাক্তাররা তখন তাঁর বাবা মাকে জানান এই সন্তান জন্মান্ধ অর্থাৎ জন্ম থেকেই অন্ধ। শুনে অবশ্য বুকের বা দিকটা চিনচিন করেছিল দুজনের। তবে ছেলেকে সঠিকভাবে বড় করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাঁরা।
জানা যায়, ছোট থেকেই প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায় ভাল ফল করতে থাকেন বাবলু। স্কুল পর্যায়ে কান্দি মহকুমার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ স্থান অধিকার করতেন তিনি। মেধাবী ছাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে পড়াশোনা সেরে ছিলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে। এরপর সেখান থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন কলেজে। বলা বাহুল্য, রামকৃষ্ণ মিশনেই কলেজ স্তরের পড়াশোনা করেছেন তিনি। বলা ভাল, এখান থেকেই বিএ পাস করা
অবশ্যই পড়ুন: বাঁকুড়ায় ‘জোর করে খোলানো হল জাতীয় পতাকা!’ সরকারের উপর ক্ষোভ উগরে দিলেন শুভেন্দু
জানা যায়, বাবলুর ট্রেড ছিল মেটাল কাটিং অ্যাটেনডেন্ট। গত সেপ্টেম্বরের 4 তারিখ হয়েছিল সেই পরীক্ষা। ফলাফল প্রকাশিত হয় মাসের শেষে। মনের জোরে অন্ধকার জগতের মধ্যে দিয়েও নিজের ভবিষ্যতের আলো খুঁজে নিয়েছিলেন বাবলু। তাই তো পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতেই জানতে পারেন দেশের 46 জন প্রতিবন্ধী টপারের মধ্যে রয়েছেন তিনি। আর এর পরই চলতি মাসের 4 তারিখ দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে নরেন্দ্র মোদির হাত থেকে প্রশংসাপত্র পান বাংলার কৃতি ছাত্র। সেই সাথে বাবলু প্রমাণ করেছেন, চোখের দৃষ্টি শুধু পথ দেখায়, তবে মানসিক একাগ্রতা এবং মনের দৃষ্টি কীভাবে সেই পথে চলতে হবে সেটা শেখায়।