সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেখানে মেয়েদের জন্য একগাদা সুবিধা দিয়ে রেখেছে, ঠিক সেখানেই দেশের মধ্যে সবথেকে লজ্জাজনক ঘটনা ঘটছে এ রাজ্যেই। এক রিপোর্ট বলছে, দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি নাবালিকা বিয়ের (Child Marriage) ঘটনা ঘটছে বাংলাতেই। সাম্প্রতিক স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই এ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
কি বলছে ওই রিপোর্ট?
রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং সেন্সাস কমিশনের দপ্তরের তরফ থেকে জারি করা ওই রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত ৬.৩% মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হচ্ছে। আর বড় রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এটি সবথেকে বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঝাড়খণ্ড, যেখানে এই হার ৪.৬% আর সবথেকে কম রয়েছে কেরলে, যেখানে এই হার মাত্র ০.১%।
সবথেকে বড় ব্যাপার, গ্রামীণ ও শহর, দুই ক্ষেত্রেই প্রায় একই ছবি। কারণ গ্রামীণ এলাকায় পশ্চিমবঙ্গের নাবালিকাদের বিয়ের হার ৫.৮%, যেখানে জাতীয় ঘর ২.৫%। শহর অঞ্চলের হার তো আরও ভয়ংকর। কারণ সেখানে ৭.৬% মেয়েরই ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হচ্ছে, যেখানে জাতীয় স্তরে হার মাত্র ১.২%। শহর অঞ্চলের দিক থেকে এর পরেই রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর, যেখানে ৩.৫% এবং উড়িষ্যায় ২.৮%।
গত কয়েক মাসে সামান্য হ্রাস
প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের এপ্রিল-মে মাসের প্রকাশিত রিপোর্টে এই হার ছিল ৬.৫%। তবে সেপ্টেম্বরের রিপোর্ট সামান্য হ্রাস পেয়েছে। এখন দাঁড়িয়েছে ৬.৩%। আর এহেন পরিস্থিতিতে দেশের মধ্যে সবথেকে অবস্থা খারাপ পশ্চিমবঙ্গের তা বলা অপেক্ষায় রাখে না। জাতীয় স্তরেও নাবালিকাদের বিয়ের হার ২.৬% থেকে কমে ২.১%-এ নেমে এসেছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য তাহলে কোথায়?
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেছিলেন কন্যাশ্রী প্রকল্প, যার লক্ষ্য ছিল নাবালিকাদের বিবাহ আটকানো ও মেয়েদেরকে শিক্ষায় উৎসাহিত করে তোলা। আগস্ট মাসে কন্যাশ্রী দিবসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের আওতায় ৯৩ লক্ষ কন্যা সন্তান সুবিধা পেয়েছে, আর শীঘ্রই তা ১ কোটি ছাড়াবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, এবছর বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ৫৯৩.৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আর ২০২৪-২৫ সালে ১৫.৭৫ লক্ষ মেয়ে বার্ষিক ১০০০ টাকা করে কন্যাশ্রী প্রকল্প বাবদ ভাতা পেয়েছে। এমনকি এককালীন অনুদান অর্থাৎ ২৫,০০০ টাকা করে মোট ২.০১ লক্ষ কন্যা পেয়েছে। তাছাড়াও রাজ্যের ২০২৫-২৬ বাজেটে ১১.৮ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বিভিন্ন রকম নারী-সুরক্ষামূলক প্রকল্পের জন্য, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৮% বেশি।
আরও পড়ুনঃ ‘ভারত আমার কাছের, মোদী আমার প্রিয় বন্ধু!’ শুল্কের মাঝেই সুর নরম করলেন ট্রাম্প
আর এই বিপুল বরাদ্দ, প্রকল্প ও সচেতনতামূলক প্রচারের পরেও প্রশ্ন উঠছে, কেন তাহলে নাবালিকা বিয়ের হার পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক? বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, এর পিছনে মূল কারণ দারিদ্র্য ও অল্প বয়সে মেয়েদের শিক্ষা থেকে বিচ্ছেদ এবং সামাজিক প্রথা ও কুসংস্কার।