শ্বেতা মিত্রঃ কলকাতা (Kolkata) শহর বেশ কিছু জিনিসের জন্য বিখ্যাত। যার মধ্যে অন্যতম হল হলুদ ট্যাক্সি। যতই অ্যাপ ক্যাব থাকুক না কেন এই ‘Yellow Taxi’ আলাদাই একটা নস্টালজিয়া। তবে এবার এই ঐতিহ্যবাহী ট্যাক্সিই বিপন্ন। বিগত কয়েক বছরে শহরে অনেকটা মাত্রায় এই ট্যাক্সির সংখ্যা কমেছে। আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হু হু করে কমছে হলুদ ট্যাক্সির সংখ্যা
জানলে অবাক হবেন, ১৫ বছরের পুরনো হওয়ার দরুণ চলতি বছরেই ৭০০০ এর মধ্যে ৪৫০০ ট্যাক্সি উঠে গেছে। আর এই ঘটনা শহরের পরিবহন ল্যান্ডস্কেপকেই রীতিমতো বদলে রেখে দিয়েছে। এই হলুদ ( আগে হলুদ-কালো) অ্যাম্বাসাডর ট্যাক্সি কয়েক দশক ধরে হাওড়া ব্রিজ এবং ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো কলকাতার সমার্থক হয়ে উঠেছে। তবে ২০১৫ সালে যখন অ্যাপ ক্যাবগুলি ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে শুরু কফে তখন থেকে এই হলুদ ট্যাক্সির জনপ্রিয়তাও হ্রাস পেতে শুরু করে।
এমনিতে এখন নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে যে ১৫ বছরের পুরনো কোন গাড়িকে রাস্তায় আর চলতে দেওয়া যাবে না। ২০০৮ সালে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, শহরের রাস্তায় ১৫ বছরের বেশি পুরনো কোনও বাণিজ্যিক গাড়ি চলতে পারবে না। পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, গাড়ির এই বয়সসীমা পেরিয়ে গেলে পারমিট ও ফিটনেস সার্টিফিকেট পুনর্নবীকরণ করা যায় না।
তবে কি বিদায়ের পথে হলুদ ট্যাক্সি?
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্যাক্সি অপারেটররা জানিয়েছেন, যে ৪,৪৯৩টি মিটার ইয়েলো ক্যাব পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হচ্ছে, সেগুলি ছাড়াও আগামী বছর থেকে এই ধরনের আরও ২,৫০০ গাড়ি (প্রধানত ডি এবং ই সিরিজের অ্যাম্বাসেডর) পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। এর ফলে মিটারযুক্ত হলুদ ক্যাবের মোট সংখ্যা ৩ হাজারের নিচে নেমে আসবে। ২০২০ সালে পরিচালিত একটি প্রাক-মহামারী সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে শহরের রাস্তায় প্রায় ১৮,০০০ হলুদ মিটারযুক্ত ক্যাব ছিল। পরবর্তী লকডাউন এবং ১৫ বছরের বাধ্যতামূলক সময়সীমা অনেকের চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই বিষয়ে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জীব রায় ট্যাক্সি অপারেটরদের আর্থিক টানাপোড়েনের কথা উল্লেখ করে বলেন, নতুন বিএস সিক্স-কমপ্লায়েন্ট ট্যাক্সি কেনার জন্য উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার দাম এখন ৮ লক্ষ টাকারও বেশি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে ভাড়া সংশোধনের অভাব এবং ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয় এমন একটি পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। অনেকেই আছেন যারা এখন এই হলুদ ট্যাক্সি চালানোর পেশা থেকে সরে আসছেন। অনেকের কাছে আবার সীমিত বিকল্প রয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছেন যে যত সময় এগোচ্ছে তাতে করে আগামী কিছু বছরে হলুদ ট্যাক্সি আর কলকাতার রাস্তায় নাও দেখা দিতে পারে।