সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী সোশ্যাল মিডিয়া। তবে সেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কখন কি ভাইরাল হয়ে যায়, তা বলা যায় না। কখনো আনন্দ, কখনো আবেগ, আবার কখনো দুঃখের মুহূর্ত আলোচনার শিরোনামে থাকে। আর সম্প্রতি এমনই এক ভিডিওকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এবারের ঘটনাস্থল পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের জিলিংসেরেং গ্রাম।
সেখানকার এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মালতী মুর্মু নামের এক আদিবাসী গৃহবধূ কোলে বাচ্চা নিয়ে গ্রামের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন, তাও বিনা পয়সায়। আর ভিডিওতে বলা হয়েছে, তিনি একা হাতে স্কুলও চালাচ্ছেন, কোনোরকম সাহায্য পান না। মানবিকতার খাতিরেই তিনি এসব কাজ করছেন। কথাগুলো শুনে চোখে জল এলেও বাস্তবতা কি এটাই? ভিডিওটির সত্যতা কী?
গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া
এই ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে অক্ষয় ভগত নামের এক গ্রামবাসী ফেসবুকে লিখেছেন, তিনি জিলিংসেরেং-র পাশের গ্রামের মানুষ। জিলিংসেরেং-র এর মানুষ তাঁদের গ্রামের হাটে কাঠ বিক্রি করেন এবং দরকারি সামগ্রী কিনে বাড়ি ফেরত যান। এমনকি তাদের ভোট কেন্দ্র জিলিংসেরেং-র নীচের গ্রাম বুকাডি। তবে এই ভিডিও নিয়ে তার মাথায় কিছু প্রশ্ন আসছে।
প্রথমত, পুরুলিয়ায় যেখানে সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে, সেখানে নতুন করে বেসরকারি স্কুলের প্রয়োজন কেন? হ্যাঁ, জিলিংসেরেং গ্রামে আগে থেকেই রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এমনকি সেখানে মিড-ডে মিল, বই, ইউনিফর্ম, এমনকি বিনামূল্যে পড়াশোনা করানো হয়। তাহলে নতুন করে স্কুল চালানোর নেপথ্যে আসল যুক্তি কী?
তিনি মনে করছেন, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ স্ক্রিপ্টেড। কারণ ভিডিওতে মালতী দিদিকে কোলে বাচ্চা নিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে, কেউ টাকা দেয় না, তিনি একাই লড়ছেন। লক্ষ্য একটই—যেন আরও সাহায্য আসে আর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। পাশাপাশি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিশুদের পোশাকে একটি করে এনজিও’র লোগো এবং ঘর তৈরীর সামগ্রী, মিড-ডে মিলের পাত্র।
আরও পড়ুনঃ দামে কম, ফিচার্সে ভরপুর! Tata, Hyundai-কে টপকে বিক্রিতে রেকর্ড Maruti-র এই SUV-র
পুরুলিয়াকে কেন দয়ার পাত্র বানানো হল?
অক্ষয় ভগতের পোস্ট অনুযায়ী, সামনেই দুর্গাপূজো, অনেকেই পুরনো জামাকাপড়, খাবার দান করতে আসবে। কেউ কেউ তো টাকাও তুলে দেবে পুরুলিয়ার জন্য। আবার তারাই হাওড়া বা কলকাতার ফুটপাতের মানুষ দেখে ফিরে তাকাবে না। কারণ, পাহাড়ি জনজাতি বা দারিদ্রদের প্যাকেজে ভিউ বেশি আসে। এমনকি সাহায্যও বেশি আসে। তাই ভাইরাল হওয়ার জন্যই হয়তো এই পদক্ষেপ। আসলে এই টাকাগুলো আদৌ বাচ্চাদের বই কিনতে বা মিড-ডে মিলের জন্য খরচ হবে, নাকি সেই টাকাতে কারো বিদেশ ভ্রমণ বা নতুন গাড়ি কেনা হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অক্ষয় ভগত ওই পোস্টে অনুরোধ করেছেন, পুরুলিয়াকে যেন দয়ার পাত্র বানিয়ে কেউ এভাবে আত্মসাৎ না করে। সবার সামনে এই সমাজসেবার মুখোশ খুলে দিতে বলা হয়েছে। এমনকি আগে যাচাই করে তারপর দান করতে বলা হয়েছে। তাই অযথা কোনো কিছু যাচাই না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে সকলেই বিরত থাকুন।
অক্ষয়বাবুর ওই পস্তে অনেকেই আবার মালতী মুর্মুর সেই স্কুলের কিছু ছবি দিয়েছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে একদল মানুষ মালতী মুর্মুর স্কুলের জন্য দান করছেন। সেখানেই পুরুলিয়ার এক বাসিন্দা ছবি দিয়ে লিখেছেন যে, ‘আগে খোলা ছিল, আমরা পরে ছাউনির ব্যবস্থা করি।’ সেখানে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে আর সেই ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে যে ব্যাকওয়ার্ড কমিউনিটি অ্যালায়েন্স নামের এক সামাজিক সংগঠন মালতী মুর্মুর ওই স্কুলের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তবে NGO থেকে হোক আর আশেপাশের মানুষের সাহায্য নিয়েই হোক। মালতী মুর্মুর এই সংগ্রামের কাহিনীকে আমরা স্যালুট জানাই। যেভাবে তিনি পুরুলিয়ার বাচ্চাদের শিক্ষিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা দেখে শুধু আমরাই নয়, গোটা বাংলা অভিভূত।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |