প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: জল থেকে মাথায় ঢুকছে অ্যামিবা, শরীরে বাঁধছে বাসা। কেরলে এইমুহুর্তে নয়া আতঙ্কের নাম হল এই ‘মস্তিষ্কখেকো’ অ্যামিবা। সেখানকার অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। যার দরুন ধীরে ধীরে এই আতঙ্ক এখন ঘিরে ধরেছে গোটা দেশের মানুষকে। পুকুরের জল থেকে ছড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাতেও। আক্রান্ত হয়েছেন হুগলির (Hooghly) শ্রীরামপুরের বাসিন্দা পেশায় কল মিস্ত্রি প্রবীর কর্মকার।
অ্যামিবার থাবা মস্তিষ্কে!
রিপোর্ট অনুযায়ী, দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন ৫৬ বছরের শ্রীরামপুরের বাসিন্দা পেশায় কল মিস্ত্রি প্রবীর কর্মকার। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে ভয়ঙ্করভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের দাবি, বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন প্রবীরবাবু। ধীরে ধীরে হাঁটা চলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েও চিকিৎসার উন্নতি হচ্ছিল না। অবশেষে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন প্রবীর কর্মকার। সেখানে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। আর তাতেই ধরা পড়ে প্রৌঢ়ের মস্তিষ্কে এক কোষী অ্যামিবা বাসা বেঁধেছে। এরপরেই শুরু হয় চিকিৎসা। বর্তমানে তিনি শ্রীরামপুরের বাড়িতেই রয়েছেন।
কী বলছে রোগীর পরিবার?
শারীরিক দুর্বলতা না কাটলেও অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠছেন প্রবীর বাবু। তিনি জানিয়েছেন, ”কথা জড়িয়ে যেত আমার, কোনও জ্ঞান থাকত না।” পরিবারের ধারণা, শ্রীরামপুর শেওড়াফুলি এলাকার গৃহস্থ বাড়িতে কল সারানো ও জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার কাজ করতেন যেহেতু তিনি সেই ট্যাঙ্কের নোংরা জল থেকেই প্রবীরবাবুর মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে অ্যামিবা। প্রৌঢ়ের স্ত্রী পম্পা কর্মকার বলেন, “আমরা প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসকরাই বললেন কোনও কারণে ওঁর মস্তিষ্কে অ্যামিবা আক্রমণ করেছে। যে কারণেই শারীরিক এই অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। একদমই বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না। সেই অবস্থা থেকে এখন অনেকটাই ভাল আছেন, সবার সঙ্গে কথা বলছেন, হাঁটাচলা করছেন।”
আরও পড়ুন: মহালয়ার রাতে ইকো পার্কে পাশে পুলিশকর্মীকে পিষে দিল বেপরোয়া গাড়ি! মৃত এক, আহত দুই
উল্লেখ্য, কেরলে এইমুহুর্তে ১৯ জন ব্রেন ইটিং অ্যামিবার আক্রমণে মারা গিয়েছেন। বাংলাতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। মগজখেকো অ্যামিবার থাবায় বাংলায় গত দু’বছরে ২৫ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও ৭০ শতাংশ রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই বছর দুজনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে। ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডাঃ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, “এই বিষয়ে আমাদের রাজ্যের মানুষের এখনই উদ্বেগের কিছু নেই। যেহেতু নাগলেরিয়া ফাউলেরি নামক আদ্যপ্রাণীটির চিকিৎসা আছে, সময় মতো চিকিৎসা করলে আক্রান্তকে সারানো যায়।”