প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যজুড়ে পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে তরুণের স্বপ্ন (Taruner Swapna) প্রকল্পে ট্যাবের অর্থ প্রদান করা নিয়ে একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটেই চলেছে। সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একাধিক জায়গা থেকে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। কখনও কোনো পড়ুয়ার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হচ্ছে তো আবার কখনও কোনো পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ডবল বার টাকা ঢুকছে। যার ফলে বেশ উদ্বিগ্ন এবং চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন।
ট্যাবের অর্থ দুর্নীতিতে গ্রেফতার ১০ জন!
এদিকে শেষ আপডেট অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ট্যাব কেলেঙ্কারিতে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া ১০ জনের মধ্যে ৬ জন উত্তর দিনাজপুরের। ৪ জন মালদার বাসিন্দা। এদের প্রায় সবাই সাইবার ক্যাফের মালিক। সেখানে বসেই কারচুপি হয়েছে বলে তদন্তে অনুমান। এমনকি ট্যাবের টাকা নাকি চাষি ও দিনমজুরের অ্যাকাউন্টেও ঢুকেছে। তবে তদন্তের ভার একা শুধু পুলিশের হাতে নেই। পুলিশের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারকে।
কী বলছেন শিক্ষামন্ত্রী?
এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, “আমার মনে হয়, বাইরের দু-একজন এই ভয়ংকর কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। পোর্টাল হ্যাক করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার বা এনআইসি-কে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। NIC ইতিমধ্যেই একটা SOP তৈরি করেছে এবং কোন কোন হ্যাকার এই কারচুপির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের চিহ্নিত করেছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই অসাধু কাজের সঙ্গে যুক্ত কেউ ছাড় পাবে না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।” আর এই আবহেই এবার ট্যাবের টাকা পাওয়ার জন্য তথ্য আপলোডের প্রক্রিয়ার ভার পড়ুয়াদের হাতেই দিতে চলেছে বলে জানা যাচ্ছে নবান্ন সূত্রে।
নিজেদের তথ্য নিজেরাই আপলোড করবে পড়ুয়ারা
জানা গিয়েছে, রাজ্য শিক্ষা দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এবার থেকে প্রধান শিক্ষকরা আর ট্যাবের তথ্য পোর্টালে আপলোড করবেন না। কারণ এখন থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে শুরু করে নিজের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপলোড করবে একমাত্র পড়ুয়ারাই। ফলে ভুলত্রুটি হলেও কেউ শিক্ষা দফতর বা স্কুল কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলতে পারবে না। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রাজ্যের তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তর ও স্কুল শিক্ষা দপ্তর যৌথভাবে কাজ করবে। তারপরেই পড়ুয়ারা নিজেদের তথ্য নিজেরাই আপলোড করতে পারবে। শিক্ষা দফতরের নেওয়া সিদ্ধান্তকে শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশ আনন্দ সহকারে খুশি মনে মেনে নিলেও। নয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন।
কারণ, বর্তমানে শুধু দ্বাদশ নয় একাদশ শ্রেণিতেও ট্যাবের টাকা দেয় রাজ্য সরকার। আর একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা প্রায় সবাই এখন নাবালক বা নাবালিকা। তাই সেক্ষেত্রে যদি কোনো গরমিল বা দুর্নীতির অন্ধকার দেখা যায় তাহলে যাবতীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে সেই পড়ুয়াকেই। এমনকী তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগও দায়ের হতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের এই ঝুঁকির মধ্যে না ঠেলাকেই মদত দিচ্ছেন অনেকে।