প্রীতি পোদ্দার: আরজি কর কাণ্ডকে ঘিরে এখনও উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। প্রথম থেকেই সেই তরুণী চিকিৎসক এর ধর্ষণ কাণ্ডে খুনের ঘটনার তদন্তে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একাধিক নানা প্রশ্ন তুলেছিল হাইকোর্ট। এমনকি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আন্দোলনেও সরব হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ। যার ফলে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি তোলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। শেষমেশ তাঁদের আন্দোলনের চাপে সরিয়ে দিতে হয় বিনীত গোয়েলকে। আর এই আবহে ফের আরেক ধর্ষণ কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত।
ফের আদালতের চাপে পড়ল কলকাতা পুলিশ!
ঘটনাটি আজকের নয়। গত জুলাই মাসের ১৪ তারিখ, রাত ১১:৩০ নাগাদ এবং ১৫ তারিখ ভোর ৬:৩০ নাগাদ ২ দফায় বাড়িতে ঢুকে রাজ্যের বাইরে কর্মরত এক IAS অফিসারের স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ করা হয় তাঁকে। এনিয়ে অভিযোগ জানাতে লেক থানায় নিগৃহীতা গেলেও পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। জানা গিয়েছে বিকাল ৪:১৫ নাগাদ লেক থানায় অভিযোগ করার জন্য গেলে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। এরপর লঘু ধারায় মামলা দায়ের অভিযোগ ওঠে। এমনকী পুলিসের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র বিকৃত করার অভিযোগ করা হয়। যা নিয়ে এবার তীব্র মন্তব্য করল হাইকোর্টের বিচারপতি।
অভিযোগে মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। সেখানে প্রাথমিকভাবে সঠিক ধারায় FIR দায়ের না হওয়া এবং অভিযোগপত্র বিকৃত করার যে অভিযোগ উঠছে তার ফলে এই তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পর্যবেক্ষণ বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের। কিন্তু এদিকে নির্যাতিতার মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের স্বপক্ষে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি করে রাজ্য। যার ফলে অভিযুক্তের গ্রেফতারির পরেই নিম্ন আদালতে সঙ্গে সঙ্গে জামিন মঞ্জুর হয়ে যায়। যদিও নিম্ন আদালতে অভিযুক্তের জামিন কলকাতা হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়।
অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য নির্যাতিতাকে চাপ!
এদিকে FIR দায়ের করার পরেই অভিযুক্তের স্ত্রী এবং ছেলেকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এবং অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য অভিযুক্তের স্ত্রী এবং ছেলে চাপ দেয় বলে দাবি নির্যাতিতার। আশঙ্কা করা হচ্ছে চাপ দেওয়ার জন্যই এদের নিয়ে আসা হয়েছিল। এমনকি নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন বোধ করেননি তদন্তকারী আধিকারিকরা। বরং নির্যাতিতা নিজেই সরকারি হাসপাতালে যান এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট তদন্তকারী আধিকারিককে দেন। গোটা ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আদালত।
আদালতের নির্দেশে মামলা হস্তান্তর করা হয়
এদিন শুনানি শেষে হাইকোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, এই মামলা একজন ডেপুটি কমিশনারের পদমর্যাদার একজন মহিলা পুলিশ আধিকারিককে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এখন থেকে সেই মহিলা পুলিশ আধিকারিকই হবেন তদন্তকারী অফিসার। এবং এর পাশাপাশি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে লেক থানার তৎকালীন ওসি, একজন সাব-ইন্সপেক্টর, একজন সার্জেন্ট এবং তিন জন মহিলা পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।