প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিধানসভা অধিবেশনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশে নতুন অনগ্রসর সম্প্রদায়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই নতুন তালিকাতে ওবিসি হিসেবে 140 টি জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এই আবহে OBC সংক্রান্ত মামলায় (OBC Certificate Case) রাজ্যের এই নয়া সমীক্ষায় ত্রুটি রয়েছে দাবি করে ফের কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। আজ সেই মামলায় মৌখিক ভাবে আদালত নির্দেশ দেবে বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্যের দ্রুত সমীক্ষা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন!
প্রাপ্ত রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে ওবিসি তলিকা নিয়ে রাজ্যের সমীক্ষায় নাকি একাধিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তাই সেই সকল ত্রুটি এবং সমীক্ষা সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ তুলে ধরে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মামলাকারী অমল চন্দ্র দাস।
তাঁর আইনজীবি এদিন আদালতে জানান, রাজ্য মন্ত্রিসভা যে 140 টি ওবিসি সম্প্রদায়কে তালিকাভুক্ত করেছে সেই তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। রাজ্য সরকার কিভাবে দ্রুত সমীক্ষা চালিয়ে তালিকা নির্দিষ্ট করল, সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন মামলাকারি।
ক্ষুব্ধ বিচারপতি!
এ দিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জানান, ‘আমরা নির্দেশ দিয়েছিলাম যে বিধানসভায় বিল আকারে পাশ করাতে হবে। কিন্তু রাজ্য তা না করে প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিজেদের সিদ্ধান্তে মান্যতা দিয়েছে। যদি রাজ্য নিজের মতো করে কাজ করে তাহলে কোর্ট প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হবে।” এছাড়াও আদালতের তরফ থেকে জানানো হয় যে, “আমরা নিয়োগ বা ভর্তি কোথাও বন্ধ করতে বলিনি। যে সম্প্রদায়কে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তারা বিগত বিশ বছর ধরে সুযোগসুবিধা পেয়ে গেছিল, এদিকে তারা কেউ রাস্তায় আন্দোলন করে দাবি আদায় করেনি। অথচ রাজ্য সেই বাদ দেওয়াদেরই আবার সুযোগ দিচ্ছে। কেন?”
আদালতের নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা !
এছাড়াও এদিন রাজ্যকে OBC সংক্রান্ত মামলায় প্রশ্ন করা হয় যে, “যেভাবে সমীক্ষা করতে বলেছিল আদালত সেভাবে হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে আদালত। কিন্তু রাজ্য যদি একটার পর একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করতে থাকে, তাহলে মামলার কি আর কোনো গুরুত্ব থাকে ?”
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা আরও বলেন, “রাজ্য চাইলে 66 টি সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করতে পারে। আমরা আটকাচ্ছি না। কিন্তু রাজ্য নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি করছে। আদালতের নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখানো হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: নাকে নল, ভেঙেছে শরীর, অসন্তোষজনক ইকোর রিপোর্ট! অভিজিতকে দেখতে হাসপাতালে সুকান্ত
আজকের থেকেই খুলবে কলেজে ভর্তির পোর্টাল
এদিকে পূর্ব নির্ধারিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেল থেকেই কলেজে ভর্তির পোর্টাল খুলে যাচ্ছে। অন্যদিকে আজ দুপুর 2টোর সময়ে OBC সংক্রান্ত মামলায় স্থগিতাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ। সব মিলিয়ে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে ফের হয়তো কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যা মাথা চারা দিয়ে উঠতে পারে। কারণ রাজ্যের তড়িঘড়ি নতুন OBC তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে ক্ষুব্ধ হাইকোর্টও। তাই আজকে আদালতের রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর 22 মে কলকাতা হাইকোর্ট 2010 সালের পরে তৈরি রাজ্যের সব OBC সার্টিফিকেট বাতিল করে দেয়। সেই মামলার রায়ে হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, 2010 সালের আগের 66 টি সম্প্রদায়ের ওবিসি শংসাপত্র বৈধ। তার পর থেকে তৈরি সব ওবিসি শংসাপত্রই নাকি অবৈধ, সেই সূত্রে সকল শংসাপত্র বাতিল করা হয়। এদিকে রাজ্য এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি। ফলে মামলাটি এখন কলকাতা হাইকোর্টেই বিচারাধীন রয়েছে।
রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।