স্বাধীনতা সংগ্রামীর জাল শংসাপত্র, মিলত পেনশনও! মামলা উঠতেই রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

Published on:

calcutta high court

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: জালের কারবারে ডুবে গিয়েছে গোটা বাংলা। সমস্ত সরকারি নথিপত্র থেকে শুরু করে পাসপোর্ট ভিসা সবটাই জাল বেরিয়েছে। যার ফলে রাজ্যে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়েই চলেছে। বাদ যায়নি স্বাধীনতা সংগ্রামীর শংসাপত্রও। সম্প্রতি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জাল শংসাপত্র দিয়ে পেনশন (Pension) নেওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে রাজ্যে ৷ যার ফলে মামলার জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। CBI বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য।

ঘটনাটি কী?

WhatsApp Community Join Now

পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বাসিন্দা ছিলেন রামলাল মাইতি। বর্তমানে রামলাল মাইতি ও তাঁর স্ত্রী উভয়ই মৃত। সম্প্রতি তাঁর ছেলে শুকদেব মাইতি, বাবা রামলাল মাইতির পেনশনের দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এদিন আদালতে শুকদেব মাইতি দাবি জানান যে, তাঁর বাবা রামলাল মাইতি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশের লড়াইয়ে নিজের জীবনকে বাজি রেখে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসনের নজর এড়াতে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৪ সালে তাঁর বাবা আত্মগোপন করেছিলেন। তাই সেই নিরিখে, তাঁর বাবা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রাপ্ত পেনশনের অধিকারী।

উত্তরাধিকার সূত্রে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

যদিও এদিন আদালতে আবেদনকারী শুকদেব মাইতির আরও দাবি ছিল যে তাঁর বাবা রামলাল মাইতি যে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন তার অনেক প্রমাণও রয়েছে। জানা গিয়েছে সেই সময় অপর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী আরএন গিরি তাঁর বাবাকে এক শংসাপত্র দিয়েছিলেন। একক বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য রামলাল মাইতির ছেলে শুকদেব মাইতিকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারকে মোটা টাকা জরিমানাও করেন। আর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

জালি শংসাপত্র বিতরণ করতেন আরএন গিরি!

সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এই জাল শংসাপত্র মামলায় CBI কে তদন্তের নির্দেশ দেয়। আর তাতেই বেরিয়ে আসে বিস্ফোরক তথ্য। রামলাল মাইতির শংসাপত্র সম্পূর্ণ জাল বলে দাবি করে CBI। যদিও অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী জানান, আরএন গিরি নিজে ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী৷ সেই সুবাদে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে পেনশনও পেতেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে আসছে যে তিনি নাকি ১৯৪২-৪৩ সালের উল্লেখ করে বহু ব্যক্তিকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হওয়ার শংসাপত্র প্রদান করেছিলেন।

তদন্তের মাধ্যমে জানা গিয়েছে দেশজুড়ে আরএন গিরি প্রায় ২ হাজার ২০০ জনকে অবৈধভাবে শংসাপত্র দিয়েছেন। আর তার মধ্যে পড়ছে রামলাল মাইতির শংসাপত্রও। যার ফলে সুপ্রিম কোর্ট রামলাল মাইতির ছেলের করা আবেদনকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এবং হাইকোর্টে দেওয়া রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন প্রধান বিচারপতি ৷ যেহেতু হাইকোর্ট CBI এর তদন্তের রিপোর্ট দেখতে চেয়েছে তাই আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে রামলাল মাইতির অবস্থান সম্পর্কে এবং সিবিআই-এর তদন্ত সম্পর্কে একটি স্পষ্ট রিপোর্ট হলফনামার মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

সঙ্গে থাকুন ➥
X