প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সরকারী কর্মীদের DA সংক্রান্ত মামলা নিয়ে এই মুহুর্তে ব্যাপক সরগরম রাজ্য রাজনীতি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি প্রশান্ত কুমার মিশ্রের বেঞ্চে ডিএ মামলার চূড়ান্ত শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনও বাকি রায়দান। এমতাবস্থায় কর্মীদের পেনশন নিয়ে রাজ্যকে চরম ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল পেনশন এক জন কর্মচারীর অধিকার। এটি সরকারের ‘দয়ার দান’ নয় যে ইচ্ছা অনুযায়ী তা আটকে রাখা যায়।
ঘটনাটি কী?
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, দীর্ঘ প্রায় ৩৮ বছর আগে ১৯৮৭ সালে উত্তর ২৪ পরগনার গারুলিয়া পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টর হিসাবে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন প্রবীরকুমার ভট্টাচার্য। ৩৩ বছর ৩ মাসের চাকরিজীবন শেষে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসর নেন। কিন্তু প্রবীর বাবুর অভিযোগ, অবসরের পর থেকে পেনশনের টাকা আটকে রেখেছে পুরসভা। কর্তৃপক্ষকে এই ব্যাপারে জানানো হলে নানা টালবাহানা দেখানো হয় প্রবীরবাবুকে। শেষে আইনের পথে হাঁটলেন তিনি। পুরসভা থেকে প্রাপ্ত টাকা পাওয়ার জন্য মামলা করলেন হাইকোর্টে।
চার বছর ধরে মিলছে না পেনশন
গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার, হাইকোর্টের বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের বেঞ্চে পেনশন অধিগ্রহণের এই মামলা উঠলে মামলাকারী প্রবীরকুমার ভট্টাচার্যের আইনজীবী শঙ্কর বিশ্বাস অভিযোগ জানান যে, নিয়ম অনুযায়ী এক জন কর্মচারী অবসর নেওয়ার পরে পেনশন, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ অবসরকালীন টাকা পায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গারুলিয়া পুরসভা সময় মতো অবসরপ্রাপ্ত কর্মী প্রবীর কুমার ভট্টাচার্যের সার্ভিস বুক বা চাকরির নথি বানায়নি। ফলে তাঁর পেনশনের কাগজপত্র তৈরি ও অনুমোদনের কাজ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে। এবং সেই নিয়ে কোনরকম বন্দোবস্তও করছে না পুরসভা। যদিও এই পেনশনের টাকা আটকে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে নেয় পুরসভা। এমতাবস্থায় মামলাকারির অভিযোগের ভিত্তিতে পুরসভার প্রতি ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে বিচারপতি।
চরম ভর্ৎসনা রাজ্য সরকারকে!
এদিন পেনশন সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “এত বছর ধরে কেন ফাইল পড়ে থাকবে? পেনশন হল কর্মচারীর অধিকার। তা সরকারের দয়ার দান নয় যে ইচ্ছামতো আটকে রাখা যাবে। পেনশনের টাকা নিয়ে দেরি করা মানে এক জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর জীবিকার অধিকার এবং সম্পত্তির অধিকার লঙ্ঘন করা।” এখানেই শেষ নয়, হাই কোর্টের আরও পর্যবেক্ষণ যে, “এক জন অবসরপ্রাপ্ত মানুষ তাঁর জীবিকা, চিকিৎসা, সংসার চালানোর জন্য পেনশনের উপর নির্ভর করেন। তাই আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স দফতরের ডিরেক্টরের মামলাকারীর পেনশনের কাগজপত্রের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে গারুলিয়া পুরসভা যেন তাঁর প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে পুরসভা যদি কোন গড়িমসি করে তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।
আরও পড়ুন: SSKM-এ নতুন উডবার্ন ওয়ার্ড! রয়েছে ১৩১ কেবিন, ভাড়াও জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
প্রসঙ্গত, গত সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরই বেতন পেয়ে যাবেন। সাধারণত প্রত্যেক মাসের শেষ দিনে বেতন দেওয়া হয়। তবে এ বছর দুর্গাপুজোর ছুটির দীর্ঘ তালিকার কথা মাথায় রেখেই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে কেন্দ্রের ওই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য সরকারও তাদের কর্মীদের শারদোৎসবের আবহে আগাম বেতন দেওয়ার ঘোষণা করল। বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে জানানো হয়েছে আগামী ২৪-২৫ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন, সাম্মানিক, মজুরি দেওয়া হবে। এবং কর্মীদের পেনশন সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা দেওয়া হবে আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে।