প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে একের পর এক জটিলতা তৈরি হয়েই চলেছে। এমতাবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) এসএসসি মামলার শুনানিতে রাজ্যের স্কুল শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অতিরিক্ত ১০ নম্বর প্রদানকে কেন্দ্র করে নয়া বিতর্ক তৈরি হল। যার ফলে একদিকে যেমন অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অধিকারের প্রশ্ন উঠছে, ঠিক তেমনই নতুন চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
SSC-তে নম্বর প্রদানকে কেন্দ্র করে নয়া বিতর্ক
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে পার্ট-টাইম, চুক্তিভিত্তিক এবং পার্শ্বশিক্ষকদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি শুনানি চলছে। সেই শুনানিতে মামলাকারীদের পক্ষে দাবি করা হয় যে, দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর তাঁরা এই ১০ নম্বর পাওয়ার যোগ্য। তাঁদের যুক্তি, ম্যানেজিং কমিটির দ্বারা নিযুক্ত হয়ে তাঁরা প্রকৃত শূন্যপদেই কাজ করছেন এবং নতুনদের মতোই পড়ানোর অভিজ্ঞতা তাঁদের রয়েছে। কিন্তু সেই দাবি মানতে নারাজ এসএসসি আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারি দিলেন সুপ্রিম কোর্টে মামলা নিয়ে যাওয়ার।
কী বলছেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়?
এদিন এসএসসি আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানান, ‘‘চাকরির জন্য রাস্তায় ৫ লাখ পদপ্রার্থী ঘুরছে। এসএসসি-র চোখে সকলেই সমান। মামলাকারীদের জন্য কেন অতিরিক্ত গুরুত্ব দেবে আদালত? অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর পাওয়া যোগ্যদের তালিকা SSC-র কাছে রয়েছে। সাবস্ট্যানটেটিভ পোস্টের নিরিখে পার্টটাইম, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকরা সেই ১০ নম্বর পাওয়ার যোগ্য। মামলাকারীরা সেই সাবস্ট্যানটেটিভ পদের অস্থায়ী নন তাই ‘১০’ মার্কসের জন্য বিবেচিত হননি। নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর কোনওরকম হস্তক্ষেপ হলে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়াই টেনে নিয়ে যাব।‘‘
পাল্টা প্রতিক্রিয়া মামলাকারীদের
এদিকে SSC আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার হুঁশিয়ারি নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান মামলাকারীদের আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘মামলাকারীরা ১২ বছরের বেশি অস্থায়ী চাকরি করছে। প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ। প্রকৃত শূন্যপদের প্রেক্ষিতেই তাদের ম্যানেজিং কমিটি নিযুক্ত করেছে। ১০ নম্বর পাওয়ার যোগ্য তারা। আদালত তাদের বিবেচনা না করলে ইন্টারভিউ লিস্ট থেকে ছিটকে যাবেন তারা।‘‘ যদিও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র বেঞ্চ এই মামলায় এসএসসিকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর পাওয়ার জন্য ঠিক কারা যোগ্য তার একটি হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: কাটমানি না দেওয়ায় ভরতপুরে আবাস থেকে নাম কাটলেন তৃণমূল প্রধানের স্বামী!
পরবর্তী শুনানি কবে?
এছাড়াও মামলার প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের তালিকা এবং প্রকৃত শূন্য পদের সংখ্যা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শুধু তাই নয়, রাজ্যের সমস্ত জেলার ডিআই রিপোর্টও তলব করা হয়েছে, যেখানে পার্শ্বশিক্ষক ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তথ্য থাকবে। জানা গিয়েছে আগামী ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে এই সমস্ত রিপোর্ট এবং হলফনামা জমা দিতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। এবং মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৪ নভেম্বর। তাই সেই শুনানির দিকেই তাকিয়ে এখন রাজ্যের কয়েক লক্ষ চাকরিপ্রার্থী।