প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে। যদিও এই নিয়ে এখনও মামলা চলছে হাইকোর্টে। এমতাবস্থায় রাজ্য জুড়ে ডিপিএসসির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠল হাইকোর্টে। শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে ২০১৫ পরবর্তী জেলার DPSC -র কোনও বৈধতা নেই। সেই কারণে এবার প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষক বদলি এমনকি ২০১৫ সাল থেকে হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার।
মামলার প্রেক্ষাপট
নিউজ ১৮ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, নীলাঞ্জনা মাইতি, তিনি পূর্ব মেদিনীপুর কসবা শীতলা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁকে বদলি করা হয়েছিল অন্য একটি স্কুলে। সেই বদলির নির্দেশিকা ইস্যু করেন DPSC চেয়ারম্যান। কিন্তু তাঁর বদলির এই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। সেই সময় নীলাঞ্জনা মাইতির হয়ে আদালতে মামলা লড়েন ফিরদৌস শামিম। সেই মামলায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু DPSC-র নির্দেশিকায় স্থগিতাদেশ দেন। অন্যদিকে সেই বদলির নির্দেশিকাকে বাতিল করে পূর্ব মেদিনীপুরের DPSC-র সেক্রেটারি তিনি আবার আরেকটা বদলির নির্দেশিকা দেন নীলাঞ্জনা মাইতিকে। কিন্তু সেই নির্দেশিকাকেও চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয়। গতকাল অর্থাৎ সোমবার, বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বেঞ্চে তাঁর শুনানি হয়। আর সেখানেই DPSC নিয়ে বড় আপডেট দেন বিচারপতি।
DPSC-তে নেই কোনও সদস্য!
২০১৫ সাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা-সহ রাজ্যের DPSC অর্থাৎ জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিষদের চেয়ারম্যান থাকলেও এই পরিষদের কোনও সদস্য নেই। সেক্ষেত্রে মামলায় প্রাথমিক শিক্ষকদের কীভাবে বদলি হচ্ছে তাই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নীলাঞ্জনা মাইতির আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের যুক্তি, “কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত প্রধান ইত্যাদি মিলিয়ে মোট ৪৪ জন সদস্য মিলে সংগঠিত হয় ডিপিএসসি। কিন্তু ২০১৫ সালের পর কোথাও চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি ছাড়া আর কেউ নেই। দেখা যাচ্ছে, তাঁরাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শাসকদল ঘনিষ্ঠ। সবমিলিয়ে বাংলায় বদলির বাজার তৈরি করেছে। এই ক্ষমতা একমাত্র DPSC-র হাতে রয়েছে। কোনও চেয়ারম্যানের নয়। যদি DPSC নির্দিষ্ট করে কিছু না বলে, তাহলে কোনও বদলির নির্দেশই বৈধ নয়।”
আরও পড়ুন: অগ্রিম টাকা নিয়ে মণ্ডপ না বানিয়ে চম্পট শিল্পী! অথৈ জলে মালদহের পাঁচ ক্লাবের পুজো
শুনানিতে হাইকোর্টের বিশেষ নির্দেশ
এদিন প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে মামলাকারীর আইনজীবীর যুক্তি এবং DPSC-র ভূমিকা নিয়ে বিচারপতি রাজর্ষী ভরদ্বাজ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে, DPSC-র নেওয়া পদক্ষেপের কোনও মান্যতা নেই। অর্থাৎ ডিপিএসসির দেওয়া বদলি-সহ অন্য পদক্ষেপ অবৈধ। এদিন বিচারপতি রাজর্ষী ভরদ্বাজ যুক্তি দিয়ে জানিয়েছেন যে, “যেহেতু ২০১৫ সাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের পুনর্গঠন করা হয়নি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্য পদে নতুন করে সদস্য মনোনয়ন করা হয়নি, তাই সেই ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষকের আইনত বদলির নির্দেশ দিতে পারে না DPSC। এবার দেখার পালা রাজ্য সরকার এই আইনি চ্যালেঞ্জকে কীভাবে মোকাবিলা করে এবং শিক্ষক বদলি ও নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আইনসম্মত করতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।