প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কিছুদিন আগেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন ছাত্র সংগঠনের আবেদন উড়িয়ে পরীক্ষা ফেলা হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Calcutta University)। আর সেদিন স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় পর্যায়ের ভর্তির কাউন্সেলিংও রাখা হয়। সেক্ষেত্রে ওইদিন কোনও পরীক্ষা স্থগিত হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত। তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল টানাপোড়েন। শাসকদল এবং ছাত্র পরিষদের তরফ থেকে বুঝে নেওয়ার হুঁশিয়ারি এসেছিল উপাচার্যের কক্ষেও। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি অগ্রাহ্য করে বিশ্বকর্মা পুজোয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখে ফের বিতর্কে জড়ালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত।
সরকারের ছুটির বিজ্ঞপ্তি মানল না উপাচার্য
গতকাল অর্থাৎ ১৭ সেপ্টেম্বর, বুধবার বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে এবং শ্রমিকদের উদ্দেশে সন্মান জানাতে সরকারি ছুটির বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ বিভাগ। ওই দিন সব সরকারি, সরকার অধিগৃহীত, সরকার পোষিত অফিস, পুরসভা, পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসন, স্বশাসিত সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও ছুটি থাকবে বলে জানানো হয়েছিল, কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তি মানেন নি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত। নির্দেশ অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখার পর থেকেই শুরু হল তীব্র বিতর্ক। আর এই আবহে একের পর এক অভিযোগ উঠে এল উপাচার্যের বিরুদ্ধে। শিক্ষক ও ছাত্রমহলের একটা বড় অংশ যথাযথ তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন। বাদ যায়নি তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপাও।
কী কী অভিযোগ উঠে এসেছে?
সংবাদ প্রতিদিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত- র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। আর সেই অভিযোগের ভাণ্ডারে ছিল রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই একাধিক সিন্ডিকেট মিটিং ডাকা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে অনিয়মের অভিযোগ। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের এফডি ভাঙা ও ফান্ড খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাকি অধ্যাপকরা। এছাড়াও মানবাধিকার কোর্সের ফলাফল দীর্ঘদিন আটকে রাখা, পিএইচডি কমিটি গঠন নিয়ে পক্ষপাতিত্ব, গবেষণায় ওবিসি-এসসি প্রার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগগুলি উঠে এসেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে অধ্যাপকদের ফি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী বেআইনিভাবে পদোন্নতি করানোর অভিযোগও রয়েছে এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের কার্যত টার্গেট করে FIR করানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘ছাত্রীদের ঘুষি মারছে রাজারহাট থানার আইসি!’ ভিডিও পোস্ট করে বিস্ফোরক শুভেন্দু অধিকারী
রাজ্যপালকে সাহায্য উপাচার্যের
এছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্তর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের কোনও অনুমোদন না নিয়েই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের নাম করে অন্যায়ভাবে সমাবর্তন করিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্যপালকে ৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা সাহায্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে। তাঁর এই ১৪ দফা একগুচ্ছ অভিযোগের প্রসঙ্গে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও জবাব মেলেনি। ফোন ধরেননি বা এসএমএস-এরও জবাব দেননি। এবার দেখার পালা সামনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এই অভিযোগের বিরুদ্ধে কোন আইনি পথ গ্রহণ করে।