প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতাকে ঘিরে গত মাসে মুর্শিদাবাদে এক ভয়ংকর হিংসাত্মক পরিস্থিতি (Murshidabad Violence) তৈরি হয়েছিল। উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলবাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট থেকে শুরু করে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের উপর হামলা, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। আর এই আবহে এবার মুর্শিদাবাদের হিংসা নিয়ে বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ করল হাইকোর্টের তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি।
প্রকাশ্যে এল ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি র রিপোর্ট
হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের হিংসা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্ফোরক রিপোর্ট দিয়েছে হাইকোর্টের তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা মেহবুব আলমের নেতৃত্বেই নাকি মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়িয়েছে। রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে যে সেই সময় দুষ্কৃতীরা নাকি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে জলের লাইন কেটে দেয়। কিন্তু পুলিশ সব জানা সত্ত্বেও এর বিরোধিতা করেনি। অর্থাৎ পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র অসহযোগিতার অভিযোগ উঠে এসেছে ভুরিভুরি। আর এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই হইহই পরে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
তৃণমূল নেতাই ছিলেন হিংসার কারণ!
সম্প্রতি হাইকোর্টে তিন সদস্য কমিটির পেশ করা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত ১১ এপ্রিল তৃণমূল নেতা তথা ধুলিয়ান পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেহবুব আলম মুর্শিদাবাদে হিংসা ছড়ানো শুরু করেন। তিনি নিজে কারসাজি করে দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে যোগদান করে হিংসা ছড়ান। এছাড়াও রিপোর্টে আরও জানানো হয় যে, গত ১১ এপ্রিল দুপুরের পর দুষ্কৃতীদের আক্রমণ আরও তীব্র হয়। শাসকদলের কোনো নেতা ওই সময় এলাকার হিংসা বন্ধ করতে পদক্ষেপ করেননি। যার ফলে তবুও হিংসা জারি ছিল।
১১৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত!
অন্যদিকে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি জানিয়েছে যে আক্রান্তদের বাড়ি, দোকান ও মন্দির যখন ভাঙচুর করা হচ্ছিল এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তখন পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় ছিল। কেউ এগিয়ে আসেনি এই হিংসাত্মক পরিস্থিতি সামলানোর জন্য। এমনকি আক্রান্তদের আর্তচিৎকার শুনেও পুলিশ দাঙ্গাকারীদের রুখতে কোনও রকম পদক্ষেপ করেনি। শেষে নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে ভিটে মাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল স্থানীয়রা। এই হিংসায় শুধুমাত্র বেতবোনা গ্রামে মোট ১১৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি মন্দিরেও ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে।
আরও পড়ুন: গরমের ছুটিতেও খোলা বর্ধমানের এই স্কুল! চাঁদা তুলে মিড ডে মিল দিচ্ছেন শিক্ষকরা
এছাড়াও অনুসন্ধান কমিটির দেওয়া রিপোর্টে জাফরাবাদে বাবা ও ছেলের খুনের ঘটনার কথাও সবিস্তারে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, দাঙ্গাকারীরা হরগোবিন্দ দাসের বাড়ি দুষ্কৃতীরা প্রথমে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে দরজা ভাঙে। তার পর বাবা ও ছেলেকে একের পর এক কুড়ুলের কোপ মারা হয়। অর্থাৎ মুর্শিদাবাদের গোটা ঘটনাটাই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। তাই রিপোর্টের ভিত্তিতে কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করেছে। এর সঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তাদের সম্পত্তি ও জীবনের নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের বাড়িতে পুনর্বাসিত করার কথা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।