প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী। পর্ষদ ২০১৬ সাল থেকে তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। চাকরি দেওয়া হয় ৪২ হাজার ৯৪৯ জনকে। কিন্তু ওই নিয়োগে একাধিক ত্রুটি থাকায় ২০২৩ সালের ১৬ মে কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের (Job Cancellation Of 32000 Primary Teachers) নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং চাকরিহারা শিক্ষকেরা।
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে গুরুতর অভিযোগ!
সেই সময় এই রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। তার পর সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছিল। যদিও শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চেই এই মামলা ফেরত পাঠায়। এদিকে গত ৭ এপ্রিল বিচারপতি সৌমেন সেন এই মামলা থেকে সরে আসায় সাময়িক ভাবে শুনানি স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। আর এবার সেই মামলা নিয়ে রাজ্যের আইনজীবী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে গুরুতর অভিযোগ আনলেন।
‘খেয়ালখুশি মতো বিচার অভিজিতের!’
গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত জানান, ‘‘তখনকার সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সঠিক বিচার পদ্ধতি মেনে বিচার করেননি। তিনি সিঙ্গল বেঞ্চের সকলকে বলার সুযোগ দেননি। তাই শুনানি পদ্ধতি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। এছাড়াও বিচারপতি খেয়ালখুশি মতো শুনানি পর্ব চালিয়ে গিয়েছেন।’’
পাল্টা প্রশ্ন ডিভিশন বেঞ্চের
এছাড়াও রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত আরও অভিযোগ করেন যে, “মামলাকারীদের বক্তব্য শোনার পরে শুনানি স্থগিত করে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু তাই নয় পর্ষদের কাছে পাল্টা হলফনামা তলব করেছিলেন। অথচ এর আগে সেই একই আবেদন তিনি বাতিল (Job Cancellation Of 32000 Primary Teachers) করে দিয়েছিলেন।” কিন্তু এদিন রাজ্যের আইনজীবীর করা এই অভিযোগগুলির প্রসঙ্গ তুলে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘‘এখন কেন এই দাবি করছেন? তখন তো আপনারাই তা মেনে নিয়েছিলেন। নির্দেশনামায় সে সবের তো উল্লেখ রয়েছে।’’
মামলায় দ্রুত রায় নিয়েও উঠছে প্রশ্ন
ডিভিশন বেঞ্চের এই প্রশ্নের উত্তরে তখন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সাফাই দিয়ে বলেন, ‘‘সেই সময় কিছু করার ছিল না। প্রতিটি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে তো আর ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়া যায় না। তবে বিচার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ সেই সময় যে কাউকে যখন খুশি ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন ওই বিচারপতি। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কোনও নির্দেশ দিতেই পারেন। কিন্তু একটি পদ্ধতি তো অবলম্বন করা উচিত।’’
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, ‘‘খুব তাড়াহুড়ো করে এই মামলার রায় দেওয়া হয়েছিল। এদিকে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য কোনও তথ্য প্রমাণ সামনে আসেনি। শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে বিচারপতি দুর্নীতির কথা লিখে দিলেন।”
আরও পড়ুন: মেলেনি কোনো সমাধান! এবার আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত চাকরিহারা শিক্ষকশিক্ষিকাদের
অন্যদিকে সেই সময় সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নেপথ্যে ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ না নেওয়ার কারণ দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এইমুহুর্তে পর্ষদ জানাচ্ছে, জেলাভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ হয়। ওই টেস্টও সেই অনুযায়ী নেওয়া হয়েছিল। তাই পাল্টা বিচারপতি চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এখন বলছেন মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু এর আগে আপনারাই জানিয়েছেন প্রকাশ করা হয়নি। আপনাদের কোন অবস্থান সঠিক?’’
এ ছাড়াও এদিন প্রাথমিকে চাকরি বাতিল মামলার (Job Cancellation Of 32000 Primary Teachers) শুনানিতে পর্ষদের উদ্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট মূল্যায়নে বাইরের সংস্থাকে কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল? কী ভাবে মূল্যায়নের বরাত পেল ওই সংস্থা? কেন প্রথমে বরাতের বিষয়ে অন্য কেউ জানল না? কোন আইনের ভিত্তিতে তাদের বরাত দেওয়া হল? জানা গিয়েছে আগামী ২৩ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেদিন এই প্রশ্নের সবিস্তারে পর্ষদকে জানানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |