প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: মা দুর্গার এবার নাকি গজে আগমন, যার ফলে শস্য শ্যামলায় পরিপূর্ণ হবে গোটা ভুবন, কিন্তু তার আগেই বড় বিপর্যয় নেমে এল কলকাতার (Kolkata) বুকে। রাতভর তুমুল বৃষ্টিতে কলকাতা, সল্টলেক এবং লাগোয়া এলাকা বানভাসি চেহারা নিয়েছে। প্রচুর বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গিয়েছে। কলকাতা এবং শহরতলির নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত। রেললাইনে জল জমে ট্রেন চলাচলও বিপর্যস্ত। বিভিন্ন এলাকায় পুজোর প্রস্তুতি রীতিমত মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোথাও ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ স্টল। কোথাও ভেসে গিয়েছে প্যান্ডেলের বিবিধ সরঞ্জাম। এমতাবস্থায় হাই অ্যালার্ট জারি করল কলকাতা পুরসভা।
পুরসভার কন্ট্রোল রুমে মেয়র
পুজোর আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন। তার আগেই এইরূপ বৃষ্টির এমন রূপ দেখে সকলেই বেশ চিন্তিত। কলকাতা শহরের নিচু এলাকা তো বটেই, যে সমস্ত এলাকায় সচরাচর জল জমে না, সেগুলিও এখন জলের তলায়। বহু এলাকায় জমা জলের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাস্তায় বা গ্যারাজে দাঁড় করানো গাড়ির ভিতরে জল ঢুকেছে। অনেকে রাতেই বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা নিচু এলাকার লোকজনকে সাহায্য করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। কোথাও তাঁরা গাড়ি ঠেলে উঁচু জায়গায় তুলেছেন। কোথাও বিপন্ন এবং জলবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে পৌঁছলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
কী বলছেন ফিরহাদ হাকিম?
কলকাতা পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাতে টানা ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে কখনও এত পরিমাণ বৃষ্টি এর আগে নথিবদ্ধ হয়নি। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গড়িয়ার কামডহরিতে, ৩৩২ মিলিমিটার। এরপর যোধপুর পার্কে ২৮৫ মিলিমিটার, কালীঘাটে ২৮০ মিলিমিটার, তপসিয়ায় ২৭৫ মিলিমিটার। ভোর চারটে থেকে গঙ্গার সব লকগেট খোলা হয়েছে। আবার দুপুর ১২টায় লকগেট বন্ধ করা হবে। ফলে ওই সময় ফের ভারী বৃষ্টি হলে জলযন্ত্রণা আরও বাড়বে। এদিকে দুর্যোগের মেঘ এখনও কাটেনি। আজও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন যে, “কলকাতা জুড়ে এই বানভাসি পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে KMC কন্ট্রোল রুম। কলকাতা জুড়ে সমস্ত এলাকায় জরুরি পরিষেবা নিয়ে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে। সকল নাগরিককে নিরাপদে থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: টেট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের তৎপরতা! ১৫ দিনের মধ্যে কর্মরত শিক্ষকদের তথ্য চাইল পর্ষদ
অন্যদিকে শেষ আপডেট অনুযায়ী উৎসবের শহরে দুর্যোগে দুর্বিপাকে মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। চারিদিকে জলমগ্ন রাস্তাঘাটে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পরে রয়েছে। যার ফলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে ৭ সাধারণের। বেনিয়াপুকুর, বালিগঞ্জ প্লেস, কালিকাপুর, নেতাজি নগর, মোমিনপুর ও হরিদেবপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে পথচারীদের। CESC-কে ওই এলাকাগুলিতে প্রথমে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে৷ বারংবার কলকাতা পুরসভা থেকে জানানো হয়েছে যে প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাড়ির বাইরে না বের হন কারণ অনেক জায়গায় মিটার বক্স খোলা রয়েছে।