ফের ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার, হাইকোর্টের রায়ে কাটল দীর্ঘদিনের নিয়োগ জট

Published on:

calcutta high court

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: একের পর এক মামলায় জর্জরিত রাজ্য সরকার। কখনও নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত মামলা, তো কখনও আবার রেশন সংক্রান্ত মামলা। সেক্ষেত্রে আদালতের রায় কখনও রাজ্যের পক্ষেও আসে তো আবার কখনও বিপক্ষেও যায়। আর এই আবহে ফের খবরের প্রসঙ্গে উঠে এল ICDS সুপারভাইজার পদে নিয়োগের অভিযোগ। তবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ মামলায় এবার কলকাতা হাইকোর্টের কাছে বড় ধাক্কা খেল পশিমবঙ্গ সরকার। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে রাজ্যকে অবশ্যই মানতে হবে এই নিয়ম।

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা

WhatsApp Community Join Now

এদিকে মামলার বয়ান অনুযায়ী ICDS সুপারভাইজার পদে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এবং পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৯ সালে। মাঝে ৩৪৫৮টি ICDS সুপারভাইজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আর এই নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার উল্লেখ করে বলা হয়েছিল যে সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্যপদের ৫০% অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং ৫০ শতাংশ বাইরে থেকে নিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু এই নির্দেশের একেবারেই ধার ধারেনি রাজ্য সরকার।

নির্দেশ মানেনি রাজ্য সরকার

রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের জন্য শুধুমাত্র ৪২২টি শূন্যপদ রেখে বাকি ৩০৩৬ টি শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তাইতো রাজ্য সরকারের এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কিছু অঙ্গনওয়ারির কর্মী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেইসময় বিচারপতি লাপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে ৫০ শতাংশ শূন্যপদে পদোন্নতির ভিত্তিতেই অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের থেকেই নিতে হবে। কিন্তু তবুও রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখে বলে অভিযোগ ।

এদিকে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের পদোন্নতির মাধ্যমে সুপারভাইজার পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়। ১১৫২ জনের একটি মেধাতালিকাও প্রকাশিত হয়। যারা পরে মৌখিক পরীক্ষায় বসতে পারবে। কিন্তু প্যানেল প্রকাশ না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখে রাজ্য সরকার বলে অভিযোগ। তাই মেধা তালিকাভুক্ত ২০০ অঙ্গনওয়ারির কর্মী আবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। শুরু হয় শুনানি। এরপর ২০২৪ সালে ১৩ জানুয়ারি বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে যায়। কিন্তু সেখানে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের উপর কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ।

আরও পড়ুনঃ গড়িয়া থেকে স্যাট করে চলে যাবেন এয়ারপোর্ট, নোয়াপাড়া থেকে ট্রায়াল সম্পন্ন করল মেট্রো

বিচারপতির নির্দেশ

এমতাবস্থায় ICDS কর্মীদের নিয়োগ জট কাটাতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে দরবার করে মৌমিতা ঘোষ, দীপা মন্ডল সহ ৪১৫ জন মামলাকারী। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে ৫০ শতাংশ শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের চাকরি দিতে হবে। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হয়। সেখানেই বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা স্পষ্ট নির্দেশ দেন, যেহেতু বিচারপতি লাপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই তাই রাজ্য সরকার ও পিএসসিকে ৫০ শতাংশ শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে । পাশাপাশি রাজ্য সরকার ৩৪৫৮ টি শূন্যপদের মধ্যে ১৭২৯ জনকে অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিয়োগ করতে হবে। ফলে প্রায় ২৬ বছর পর ICDS সুপারভাইজার নিয়োগের জট কাটতে চলেছে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একটা বড় অংশ।

সঙ্গে থাকুন ➥
X