বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: দেখতে দেখতে সেঞ্চুরি করে ফেলল ভারতীয় লোকাল ট্রেন। মঙ্গলবার দেশের লোকাল ট্রেন যাত্রার শতবর্ষ পূরণের পাশাপাশি নিত্য যাত্রীদের বন্ধুত্ব-খুনসুটি-মনোমালিন্য ও আবেগের বয়সও একশো বছর পেরিয়েছে। আর এই উপলক্ষে গতকাল হাওড়া স্টেশনে একটি অত্যাধুনিক লোকাল ট্রেন উদ্বোধন করলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিলিন্দ দেওসকর। শহরের সাথে শহরতলীর যোগাযোগের রাস্তা আরও সরল করতে এই উন্নত প্রযুক্তির লোকাল ট্রেন চালু করা হয়েছে পূর্ব রেলের তরফে।
দেশে লোকাল ট্রেনের যাত্রা..
দিনা আনা দিন খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে নিত্য অফিস যাত্রীদের সুবিধার্থে ভারতে প্রথম লোকাল ট্রেন চালু হয়েছিল 1925 সালে। সেবার ফেব্রুয়ারির 3 তারিখ মুম্বইয়ের ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস থেকে কুরলা পর্যন্ত প্রথম গড়িয়েছিল ইএমইউ লোকাল ট্রেনের চাকা। পরবর্তীতে সেই পথ ধরেই পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর ডিভিশনে ইএমইউ পরিষেবা শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে বলে রাখি, পূর্ব রেলের লোকাল ট্রেন চলাচলের রাস্তাটা তৈরি হয়েছিল হাওড়া ডিভিশনের হাত ধরে। প্রথমবারের মতো হাওড়া এবং শেওড়াফুলি জংশনের মধ্যে লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু করে রেল।
বর্তমানে শুধুমাত্র পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনে নিত্যযাত্রীর সংখ্যা 9 লক্ষ ছাড়িয়েছে। আর সেই সাফল্যকে পাথেও করেই মঙ্গলবার ভারতীয় লোকাল ট্রেনের 100 বছর পূর্তি উপলক্ষে হাওড়া স্টেশনে (Howrah) এক বিরাট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে উপস্থিত ছিলেন, পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার থেকে শুরু করে রেলের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্তারা। আর এদিনই পূর্ব রেলের জিএমের হাত ধরে নতুন লোকাল ট্রেন পেল হাওড়া ডিভিশনের যাত্রীরা।
যাত্রী সুবিধার কথা মাথায় রেখেই চালু হচ্ছে নতুন ট্রেন
মঙ্গলবার ভারতীয় রেলের একশো বছর পূর্তিকে উপলক্ষ বানিয়ে নিত্য যাত্রীদের সুবিধার্থে উন্নতমানের লোকাল ট্রেন উদ্বোধন করলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিলিন্দ দেওসকর। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, গত 100 বছরে দেশে লোকাল ট্রেন পরিষেবা যথেষ্ট উন্নত হয়েছে। যাত্রীবহন ক্ষমতাও বেড়েছে অনেকটাই। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রায় 100 শতাংশ বৈদ্যুতিক লাইনের ব্যবস্থা করেছে রেল। পথ চলাটা এখনও অনেকটা বাকি। রেলকে এখনও দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে পৌঁছতে হবে।
মঙ্গলবার পূর্ব রেলের উচ্চ আধিকারিক আরও জানান, নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন চলাচলের জন্য হাওড়া ডিভিশনে ট্র্যাক ও সিগন্যাল সিস্টেমের উন্নতি প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই আমরা সেই কাজে হাত লাগিয়েছি। বর্তমানে কল্যাণী থেকে রানাঘাট রুটে পুরোদমে চলছে কাজ। এই কাজ শেষ হলে টেনের গতি অনেকটাই বাড়ানো হবে, বলেই জানান পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার দেওসকর।
নিত্যযাত্রীদের সমস্যা সমাধানে নামল পূর্ব রেল!
গতকাল নিত্য যাত্রীদের জন্য উন্নত প্রযুক্তির নতুন ট্রেন উদ্বোধন করে যাত্রী সমস্যার কথা উল্লেখ করেন দেওসকর। তার মতে, অফিস টাইমে নির্ধারিত সময় থেকে লোকাল ট্রেন দেরিতে আসায় যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয় অফিস যাত্রীদের। যেই সমস্যা নিয়ে বর্তমানে আমরাও যথেষ্ট চিন্তিত। পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, বেনারস রোড রেলব্রিজ এবং চাঁদমারি রেলব্রিজ তৈরি হওয়ার কারণে বর্তমানে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের।
আরও পড়ুনঃ আর হবে না ট্রেন লেট, খড়গপুর-সাঁতরাগাছি শাখায় চতুর্থ লাইন নিয়ে বড় আপডেট দিল রেল
কেননা, রেলব্রিজ তৈরির কাজ চলার কারণে প্রচুর লোকাল ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। লেভেল ক্রসিং পার করার জন্য একটু বেশি সময় নিচ্ছেন ট্রেনের চালক। যার ফলে সমস্যা বাড়ছে যাত্রীদের। তবে সেই সমস্যার সমাধানও বাতলে দিয়েছেন পূর্ব রেলের প্রধান আধিকারিক। মিলিন্দ দেওসকরের সংযোজন, যাত্রীদের সুবিধার্থে রেল ট্র্যাক ও সিগন্যালের কাজ চলছে। এছাড়াও অত্যাধুনিক থ্রি ফেজ ইএমইউ লোকাল চালু করে যাত্রীদের সময় কিছুটা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে রেল।
নতুন ট্রেনে কী বিশেষত্ব রয়েছে?
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রেলের 100 বছর উপলক্ষে যে নতুন ট্রেন উদ্বোধন করা হয়েছে বলা হচ্ছে তা মূলত অন্যান্য লোকাল ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি গতি সম্পন্ন। খানিকটা থ্রি ফেজ ইএমইউ লোকালের মতোই। বেশ কিছু রিপোর্ট মারফত খবর, যাত্রীদের সময় কমিয়ে আনতে বন্দে ভারতের মতো ট্রেনের গতি বাড়ানোর দিকে নজর রাখছে পূর্ব রেল। এবার সেই সূত্র ধরেই গতকাল উদ্বোধন হওয়া ট্রেনটির মূল বিশেষত্ব হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির ব্রেকিং সিস্টেম থেকে শুরু করে সিগন্যালিং ও ট্রেনের অতিরিক্ত গতির দিকে বিশেষ নজর দিতে পারে পূর্ব রেলের আধিকারিক।