প্রীতি পোদ্দার, শিলিগুড়ি: সমাজে মেয়েদের বোঝা মেনে চলে এক শ্রেণির মানুষ। তাঁরা মনে করে, এক বার কোনওরকমে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে আর কিছু করতে পারবে না প্রশাসন। কিন্তু সেই ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ। নাবালিকা বিয়ের ঘটনা রুখতে এবার গ্রেফতারির মতো কড়া পদক্ষেপ নিল পুলিশ। বিয়ের আসর থেকে শ্রীঘরে ঠাঁই পুরোহিত ও হবু বরের। ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়িতে (Siliguri)।
গ্রেফতার হল বর এবং পুরোহিত
স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর, রাতে অম্বিকানগরে ১৬ বছরের এক নাবালিকার বিয়ের আসর বসেছিল পুরোহিত অমৃত গাঙ্গুলীর বাড়িতে। বরের বয়স মাত্র ২১। খুব ধুমধাম নয়, ছিমছাম সেই বিয়ের আসরে উপস্থিত ছিলেন হবু বর এবং তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য। আসলে নাবালিকার কম বয়সের কারণে স্থানীয়দের অজান্তেই এক প্রকার গোপনভাবে আয়োজন করা হয়েছিল বিয়ের। এদিকে কম বয়সে নাবালিকার বিয়ের এই আইনবিরুদ্ধ ঘটনার খবর মিলতেই মধ্যরাতে বিয়ের আসরে হাজির হয় নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে বিয়ের আসর থেকে গ্রেফতার করা হয় বর ও পুরোহিতকে। রাতে নাবালিকাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ‘সেফ কাস্টডিতে’ রাখে পুলিশ।
মত ছিল না যুবকের বাবার
পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, নিউ জলপাইগুড়ি থানা এলাকার পেশায় রং মিস্ত্রি হল বর। তাঁর সঙ্গে ওই ১৪ বছরের নাবালিকার কয়েক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। এর আগে দু’বার বাড়ি ছেড়ে ওই যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যায় নাবালিকা। কিন্তু পরে পরিবার তাকে ফিরিয়ে আনলেও এ বছর দুর্গাপুজোয় দশমীর দিন সে পালানোর পরে ওই যুবকের বাড়িতেই থেকে যায়। কিন্তু সামাজিক ভাবে বিয়ে না করে বাড়িতে একটি মেয়েকে রাখা নিয়ে আপত্তি করেন যুবকের বাবা। শেষে বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে এক পুরোহিতকে জোগাড় করেন যুবক এবং বেশি টাকা দিয়ে তাঁর বাড়িতে বিয়ের ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু গোপন সূত্রের ভিত্তিতে পুলিশ হঠাৎ সেই বিয়ের আসরে এসে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানে বাধা দেয়। গতকাল নাবালিকাকে জলপাইগুড়ির একটি সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ছোবল মারতে সময় লাগবে না!’ চুঁচুড়ায় তুঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব, রচনার বানে কাহিল অসিত
১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ
জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ এই নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ করায় শুক্রবার ধৃত বর এবং পুরোহিত এই দু’জনকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে তোলা হয়েছিল। সেখানে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি রাকেশ সিং বলেন, ‘রাতে হঠাৎ আমাদের কাছে খবর আসে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে পুলিশ হানা দেয় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’ এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই পুরোহিত এর আগেও নাকি নাবালক-নাবালিকাদের বিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের বিয়ে দিতে তিনি দক্ষিণা বেশি নেন। এ বারও পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন।” যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই পুরোহিত।